একশ ঊনত্রিশ বছর আগে ১৩০২ বঙ্গাব্দের ১৯ চৈত্র রবি ঠাকুর সভ্যতার প্রতি কবিতায় লিখেছিলেন ”দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর”। চৈত্রের তাপদাহে হয়ত বিশ্ব কবির মনের অনুভূতি ব্যক্ত হয়েছিল এ ভাবে। সভ্যতার চলমান ধারায় কত অরণ্য ধ্বংস হচ্ছে তার নিখাদ হিসেব হয়ত কারও কাছে নেই, কেউ দিতেও পারবো না।
যা বলতে আজ লিখছি, ১৭ এপ্রিল, সন্ধ্যার কিছু আগে সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আমার বন্ধু হাছানুল করিমের ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে দেখি বৃক্ষের প্রতি নির্মমতার এক ভয়াল দৃশ্য। খাগড়াছড়ি শহরের কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদের পেছনে ছড়ার পাড়ে কয়েক মাস আগে বৃক্ষরোপণ করেন টিম খাগড়াছড়ির স্বেচ্ছাসেবীরা।
উদ্দেশ্য ছিল, গাছ গুলো বড় হলে ক্লান্ত পথিক ছায়া পাবেন। ছড়ার পাড়ের উন্মুক্ত জায়গা বৃক্ষ রোপণের পর তা বড় করতে পরিচর্যার কোন কমতিও রাখেননি। কিন্তু স্থানীয়রা বৃক্ষ রক্ষায় দেয়া বেড়ার বাঁশ খুলে নিয়ে যান। পরবর্তীতে গাছের গোড়ায় গরু-ছাগল বাধা, ময়লা আবর্জনা ফেলতে শুরু করেন। এতে অনেক গাছ মারা পড়ে যায়।
যে কয়টি অবশিষ্ট ছিল তা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন উদ্যোক্তারা। তবে স্বপ্ন বেশীদিন আর স্থায়ীত্ব হলো না। গাছের গোড়ায় ময়লার স্তুপে অজ্ঞাতকারী দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে গাছের বেশীর ভাগ অংশ। নোয়ে পড়েছে সবুজ পত্রপল্লব রাশি (পাতা)।
চোখের সামনে স্বপ্নের ছন্দপতন দেখে হাছানুল করিম নিজ ওয়ালে যে স্ট্যাটাস দেন তার শেষাংশে লিখেন।
“ভেবেছিলাম অন্তত এ গাছগুলো বেড়ে উঠবে। এ ৫-৬ টি গাছ বড় হলেও কম নয়। অনেক জায়গাজুড়ে ছায়া বিলাবে।
কিন্তু তা কি আর আমার সোনার দেশে সম্ভব?
মাথা ভর্তি গোবর আছে এমন লোকেরা সেখানে ফেলে এসেছে পৌর বাজার এলাকার ময়লা আবর্জনা। আর আজ সকালে কেযেন সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়…
আর আমাদের গাছগুলো…
কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি…
মানুষ নিজ থেকেতো কিছু করেই না…
আর কেউ যদি করে সেটা কীভাবে নষ্ট করবে সে চিন্তায় মগ্ন থাকে অসংখ্য মানুষ…”
সত্যিকার অর্থে, আমাদের এ শহরে বৃক্ষের প্রতি মানুষের দরদ কম। আমরা উন্নয়নের নামে গাছ নিধন করতে উৎসুক থাকি। বৃক্ষরোপনে আগ্রহী না। হাছানুলের মতো, এ শহরে আরও কয়েকজন আছেন যাঁরা ভালোবাসেন, স্বপ্ন দেখেন বৃক্ষের ছায়ায় ঢাকা থাকবে আমাদের প্রাণের শহর, জন্মভূমি খাগড়াছড়ি। তবে এ উদ্যোগ বেশী দূর এগোতে পারে না নীতি-নির্ধারকদের সুদৃষ্টির অভাবে। আসুন আমরা বৃক্ষকে ভালোবাসি, বৃক্ষের প্রতি প্রেম জাগ্রত করি।
– নুরুচ্ছাফা মানিক, সংবাদকর্মী, খাগড়াছড়ি।