আল-মামুন:: পাহাড়ে বইছে ঈদ,বৈসাবী আর বাংলা নববর্ষের উচ্ছ্বাস। শহরের কোলাহল ছেড়ে স্বজন ও প্রিয়জনদের নিয়ে ঈদের টানা ছুটি কাটাতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি। ঈদের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঈদের ছুটি কাটাতে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করছে। সমাগম বেড়েছে স্থানীয়দেরও।
সারা বছর কর্মব্যস্ততা কাটিয়ে ঈদুল ফিতরের এবার পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের বর্ণিল বৈসাবি উৎসবের সময় মিলে গেছে। ফলে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আনন্দের মাত্রা যোগ হয়েছে দ্বিগুণ।
আলুটিলা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত ব্রিজ, তারেং, রিছাং ঝরনা সবখানেই পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। এ ছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে খাগড়াছড়ি হয়ে প্রচুর পর্যটক সাজেক যাচ্ছে। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের বাড়তি আয় হচ্ছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ পর্যটকেরা।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক অভিজিৎ রায়, ফরহাদ সায়েম বলেন, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে। আলুটিলা, বৌদ্ধ বিহার, মায়াবিনী লেক ঘুরেছি। কালকে সাজেক ঘুরতে যাব।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ঈদুল ফিতরের ছুটি ও ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমাদের সাংগ্রাইং ও চাকমাদের বিজু উৎসব একই সময়ে হচ্ছে। প্রতিবছর দুই উপলক্ষ্যকে ঘিরে খাগড়াছড়িতে ব্যাপক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটে। এবার যেহেতু দুই উৎসবই একই সময়ে তাই আশা করা হচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আসবে এ জেলায়। পুরো রমজান মাস জুড়ে পর্যটন খাতে খরা থাকলেও ইতোমধ্যে ঈদুল ফিতরের ছুটি পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের পরের দিন থেকে এ সংখ্যা আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে বলছে খাত সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ির প্রধান আকর্ষণ আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, ‘সকাল থেকে এখানে প্রচুর পর্যটক এসেছে। অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটক ইতোমধ্যে ভ্রমণ করেছে। এখানে রহস্যময় সুড়ঙ্গ, নন্দন পার্ক, লাভ ব্রিজ, ঝুলন্ত ব্রিজ, কুঞ্জছায়াসহ একাধিক পর্যটন স্পট রয়েছে। তাই পর্যটকদের আর্কষণও বেশি।
খাগড়াছড়ির অভিজাত আবাসিক হোটেল গাইরিং এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা বলেন আমাদের হোটেলের অধিকাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের চাপ বেশি থাকবে।
খাগড়াছড়ি জীপ সমিতির লাইনম্যান মো. আরিফ জানান, রমজান শুরুর পর থেকে প্রতিদিন ১-২ গাড়ি পর্যটক সাজেকে আসা যাওয়া করলেও ঈদের ছুটির শুরুর পর সেটি বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
এদিকে খাগড়াছড়ি ও সাজেকে পর্যটকেদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। খাগড়াছড়ির ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটনকেন্দ্র আলুটিলা, রিছাং ঝরনা, মায়াবিনী লেক সবখানে আমাদের পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।
পর্যটক বেশি থাকায় সাজেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত স্পেশাল টিম কাজ করবে। একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে সেখানে ট্যুরিস্ট দায়িত্ব পালন করবে।’ ঈদের টানা ছুটিতে লক্ষাধিক পর্যটক ভ্রমণ করবে আশা ব্যবসায়ীদের।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ কয়েক স্তরের বাড়তি নজরদারীর ব্যবস্থা রয়েছে। ঈদুল ফিতর, বৈসাবিসহ পাহাড়ের বর্ণিল উৎসব উপভোগে যারা আসবেন সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুতি রয়েছে।