৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন: ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
আল-মামুন:: নীরবে কাঁদছে পাহাড়। চাঁরদিকে আতঙ্ক আর চাপা ক্ষােভে থমথমে পাহড়ে অসহায় বসবাসরতরা। জীবন্ত প্রাণহীন মানুষগুলো এখন যেন শুধুই অসহায় নীরব দূর্বিক্ষের পাশাপাশি স্বাভাবিক চলাচল আতঙ্কে। সব মিলিয়ে সংঘাতে ধ্বংসযজ্ঞে নীবরে কাঁদছে পাহাড়ে। হঠাৎ করে শান্ত পাহাড় কেন এতো অশান্ত! এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে?
সেই সমীকরণ নিয়ে সন্দেহের জাল যেমনি বাসা বেঁধেছে সচেতন মহলের মাঝে তেমনি অশান্ত পাহাড়ের নেপথ্যে কলকাটি নাড়ছে কারা এসব প্রশ্ন তুলছে পার্বত্যবাসী। খাগড়াছড়িতে শিক্ষক সোহেল রানাকে বেধড়ক গণপিটুনি দিয়ে হত্যার পর স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুণ,লুটপাট,ভাংচুরসহ ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের স্মৃতিই এখন শেষ সম্ভবল সাধারন ব্যবসায়িদের।
সংঘাতের চিহৃ বয়ে বেড়াচ্ছে স্মৃতি আর ক্ষত-বিক্ষত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সড়ক,ভাংচুর ও আগুনে পোড়া গাড়ি লুটপাটের ঘটনায় কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীর ধ্বংসযজ্ঞের স্থল। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে যানচলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ক্ষােভ আতঙ্ক থমথমে পরিস্থিতির রেশ কাটেনি স্থানীয়দের মধ্যে।
ব্যবসায়ীরা এমন সংঘাত চায়না বরং সংগঠিত শিক্ষক হত্যার ঘটনার রেশ ধরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বর্বরতার ক্ষু্ব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লুটপাট,অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে শনাক্তকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: সহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে দেয়া এক বক্তব্যে বুধবার দুপুরে সংগঠিত ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
একই সময় খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো: আরেফিন জুয়েল, জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান। এসময় তিনি, আইন হাতে তুলে না নিয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করাসহ পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
এদিকে-খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এবং পৌর এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজন চন্দ্র রায়।
বুধবার (২ অক্টোবর ২০২৪) ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিকাল ৩টা থেকে আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক শিক্ষককে গণপিটুনি করে মেরে ফেলার ঘটনায় খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আনতে বিকেল ৩টা থেকে সদর উপজেলা এবং পৌর এলাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
বর্তমানে জনমনে আতংক থাকলেও পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবির টহল চলছে। বাজারের দোকানপাট খোলা রয়েছে। চলছে অভ্যন্তরীন ও দূরপাল্লার যানবাহন।
এছাড়াও গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর ২০২৪) দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ ঘটনার পর পাহাড়ি ও বাঙালিরা আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন। খাগড়াছড়ি সদরের প্রাণ কেন্দ্র শাপলা চত্ত্বর সদরের মহাজনপাড়া,আনন্দনগর,কল্যানপুর,স্লুইচ গেইট, পানখাইয়া পাড়া সড়কে সংঘাতের রেশ ছড়িযে পড়ে। পরে অসংখ্য দোকানেও ভাঙচুর,লুটপাট ও মোটরসাইকেল আগুণ দেয়া হয়। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি–বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়।
নিহত শিক্ষক সোহেল রানা প্রতিষ্ঠানটির বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সদরের খেজুরবাগান এলাকায়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানা কারাগারে ছিলেন।
তিন মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর পর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। এরপর আজ আবার তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ১০–১৫ জন পাহাড়ি তরুণ অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন।
এ সময় তাঁকে পুলিশসহ কয়েকজন রক্ষা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
ঘটনার পর দুই পক্ষের উত্তেজিত লোকজন খণ্ড খণ্ড পক্ষে বিভক্ত হয়ে সদরে মহড়া দিতে শুরু করেন। দুই পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয় এ সময়।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে মো. মামুন নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে মামুনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি–বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
১৯ সেপ্টেম্বর দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে আগুন দেওয়া হয় দোকানপাটে। সে সংঘাতে পাহাড়ে ৪ জন নিহত হয়। ২০ সেপ্টেম্বর এ ঘটনার জের ধরে রাঙামাটিতে সংঘর্ষ হয়। সেখানে দোকানপাট ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। অনিক কুমার চাকমা নামের একজন মারা যান।
২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দুই জেলায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এদিকে ১লা অক্টােবরের ঘটনায় পুলিশ এবং নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আরো একটি মামলার পক্রিয়াধীন বলে জানান খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার।
একের পর এক সংঘাতে উত্তপ্ত পাহাড়ে জ্বলে উঠে প্রতিহিংসার আগুণ। আর সেই সংঘাতের আগুণ ছড়িয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে। এক দিকে সংঘাত আর অন্যদিকে সাধারন মানুষের নীরব দূর্বিকে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।