স্টাফ রিপাের্টার:: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় বেলছড়ি মৌজার হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। ভূমির রেকর্ড সংশোধন, খাজনা আদায় ও অন্যান্য ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানের বিপরীতে ঘুষ না দিলে তিনি প্রতিবেদন দেন না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাই বাধ্য হয়ে সেবাগ্রহীতাকে অবৈধ আর্থিক লেনদেন করেই নিতে হয় প্রতিবেদন।
সরকারি লোকজনের কাছ থেকেও ঘুষ আদায় করেন তিনি। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ও একটি ভিডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অডিও ক্লিপে শোনা যায়, ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি নামজারির প্রেক্ষিতে রেকর্ড সংশোধনের জন্য হেডম্যানের কাছে গেলে তিনি তার কাছে রেকর্ড সংশোধন করার রশিদ সংগ্রহ ও অন্যান্য খরচের কথা উল্লেখ করে অর্থ দাবি করেন এবং রীতিমত অর্থের পরিমাণ নিয়ে দর কষাকষি করেন।
এছাড়া অন্য একটি ভিডিও ক্লিপে হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজাকে ভুক্তভোগী ব্যক্তির নিকট হতে উৎকোচের টাকা গ্রহণপূর্বক টাকা গুণতে দেখা যায়। এসময় তার ছেলেকেও পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওতে আরেকজনকে বলতে শোনা যায় উপজেলা ভূমি অফিসে চাকরি করা সত্বেও নিজ নামজারির জন্য তার বাড়ি থেকে হেডম্যান নিজে গিয়ে ঘুষ নিয়ে আসেন। এসময় হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজাকে টাকার জন্য অনেকবার তার বাড়িতে যাওয়ার কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজা বেলছড়ি মৌজায় মৌজা হেডম্যান হিসেবে অনেক বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ৮০ এর কাছাকাছি।
হয়রানির শিকার ও ভুক্তভোগী মো. আসমাউল হোসেন বলেন, ‘আমি একটা হেডম্যান প্রতিবেদনের জন্য হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজার কাছে গেলে তিনি আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। আমি প্রথমে ৫ হাজার টাকা দেই বাকি ৫ হাজার টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তিনি আমার কাগজপত্র রেখে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে আরও ৫ হাজার টাকাসহ মোট ১০ হাজার টাকা দিয়ে হেডম্যান প্রতিবেদন পাই। আবার নুটিং শেষে খাজনা দাখিলা আনতে গেলে হেডম্যান আরও ২ হাজার টাকা চান। টাকা না দিলে কোনো কাগজ দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এর প্রতিকার হওয়া উচিত।’
মাটিরাঙা ভূমি অফিসের প্রসেস সার্ভার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘একটা প্রতিবেদনের জন্য আমি হেডম্যানের কাছে গেলে তিনি ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন। আমি টাকা কেন দিবো জানতে চাইলে আমাকে ঘর থেকে বের–ই করে দেন। পরে আমি এসিল্যান্ড স্যারকে জানালে স্যার হেডম্যানের সাথে কথা বলতে চান।
কিন্তু হেডম্যান এবং তার ছেলে কেউ স্যারের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। পরে হেডম্যান কাগজগুলো রাখেন কিন্তু টাকা না দেওয়ায় প্রতিবেদন দেননি।’ ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে কথা বলতে হেডম্যান শুভ রঞ্জন রোয়াজার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মং সার্কেল চিফ সাচিংপ্রু চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাকে কেউ লিখিত আকারে অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এখানে শুধু আমি একা নই, জেলা প্রশাসনও এখানে ভূমিকা রাখতে পারে।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘হেডম্যানের অবৈধ অর্থ লেনদেনের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। অবৈধভাবে টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’



অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন