ডেস্ক রিপাের্ট:: প্রশান্তির খোঁজে সবুজ উপত্যকায় পর্যটকদের ভীড় জমানো নতুন কিছু নয়। কোলাহল মুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। যেখানে সুউচ্চ পাহাড় আর অসংখ্য ঝিরি ঝর্ণা কাছে টানে লাখো পর্যটকদের।
দীর্ঘদিন পর টানা সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার কারণে ইট-পাথরের শহর ছেড়ে অনেকেই প্রকৃতি আর পাহাড়ের মাঝে খানিকটা সময় কাটাতে পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অবকাশযাপন কিংবা পিকনিক উদযাপনে ছুটে আসছেন পাহাড়কন্যা বান্দরবানে। এতে আবারও চাঙাভাব ফিরেছে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়।
পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকে জেলা সদরের কাছের পর্যটনকেন্দ্র নীলাচল, নীলগিরি, মেঘলা, শৈলপ্রপাত। এসব পর্যটন স্পটগুলো প্রায় এক দিনেই ভ্রমণ করা যায়। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর টিকেট কাউন্টারগুলোতে চাপ সামলাতে কর্মীদের বেগ পোহাতে হচ্ছে।
টানা তিন দিন সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় জেলায় পর্যাপ্ত-সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতেও অগ্রিম রুম বুকিং দিয়ে আসতে শুরু করেছে পর্যটকরা। এদিকে টানা ছুটিতে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট,পরিবহন, টুরিস্ট গাইড ব্যবসাসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোতে ফিরেছে ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা সদরের কাছাকাছি উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্র মেঘলা ও নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশমুখে রাস্তার দুই পাশেই বিভিন্ন জেলা হতে আগত পর্যটকবাহী বাস ও প্রাইভেটকারের সারিবদ্ধ লাইন।
ময়মনসিংহ জেলা থেকে বান্দরবানে পিকনিকে আশা গিয়াস উদ্দিন বলেন, সব পর্যটন স্পটগুলো খোলা থাকায় বান্দরবানে এসেছেন পাহাড় দেখতে। অগ্রিম আবাসিক হোটেলে রুম বুকিং থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি।
হোটেল গার্ডেন সিটির স্বত্বাধিকারী মো. জাফর বলেন, টানা সরকারি ছুটির কারণে বিপুলসংখ্যক পর্যটক এসেছে, আবাসিক রুমগুলো আগে থেকেই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। টানা চার-পাঁচ দিন এমনটা থাকবে। জেলার সব পর্যটন স্পটে ঘোরার সুযোগ থাকায় পর্যটকের সমাগম আরও বাড়বে।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল রিসোর্ট অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পর্যটন ব্যবসায় কিছুটা চাঙা ভাব ফিরতে শুরু করেছে।
সরকারি ছুটিগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকের আনাগোনা বেশি থাকে। সাম্প্রতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে এই সেক্টরের দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
এদিকে জেলায় আগত অনেক পর্যটকের ভ্রমণের পছন্দের তালিকায় থানচি উপজেলার রেমাক্রি ফলস, তিন্দু, বড় পাথর এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুক, আমিয়াখুম থাকলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে জেলা সদরসহ চারটি উপজেলা ছাড়া অন্য উপজেলাগুলোতে এখনো পর্যটকদের ভ্রমণ অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়নি প্রশাসনের পক্ষ হতে তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব জটিলতা সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটনকেন্দ্রর আশপাশে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যগণ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ, বান্দরবান জোনের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন, বান্দরবানে সারা বছরই পর্যটকরা ভ্রমণে আসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাদা পোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন।
শীতের এই মৌসুমে টানা ছুটিতে ঘুরতে আশা পর্যটকরা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে আর সুন্দর মুহূর্তগুলো নিজেদের ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করে ভ্রমণের স্মৃতিকে ধরে রাখছেন, এটা যেন এক ভিন্ন রকমের আনন্দের অভিজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে পর্যটকদের উৎসাহী মনে।