স্টাফ রিপোর্টার:: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ‘গ্রীন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এন্ড মেটানিটি ক্লিনিক এর ফেসবুক পেইজ থেকে অপারেশনে থিয়াটারে থাকা নারী রোগীর ব্যক্তিগত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করায় তোলপার শুরু হয়েছে।
গত শুক্রবার রাত ১০ টার কিছু সময় আগে উপজেলার গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড মেটানিক্যাল ক্লিনিকের ফেসবুক পেইজে এই পোস্ট করা হয়। ছবিতে দেখা যায়, গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেটানিটি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে বিছানায় শুয়ে আছে একজন নারী রোগী।
তাঁর চিকিৎসা করছেন দুইজন চিকিৎসক। পাশে দাড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি চিকিৎসককে লাইট হাতে আলো দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে আরেকজন নার্স পাশে দাড়িয়ে আছেন। গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড মেটানিটি ক্লিনিক এর ফেসবুকে করা একই পোষ্টে ক্যাপশনে যা লিখা ছিল তা হুবাহু তুলে ধরা হল— ‘সার্জন ডাঃ দ্বীপ নারায়ন, এনেস্থেশিওলোজিস্ট ডাঃ অরবিল চাকমা এবং রিফাত আরা শাফি সফলভাবে এবসেস -পোড়া (ফোঁড়া) অপারেশন সম্পন্ন করেন গ্রীন লাইফ হাসপাতালে।’
এই পোস্ট করা মাত্রই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর বিপরীতে নানান রকম নেতিবাচক মন্তব্য আসতে শুরু করে। অনেকে এই পোস্টের শেয়ার করে লিখেন, ‘চিকিৎসা করছেন ঠিক আছে তবে নারী রোগীর পাইভেসি কতোটা মেন্টেন করছেন।
‘স্থানীয় সাংবাদিক আক্তার হোসেন নিজ প্রফাইলে পোস্টটির স্কিনসট শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘দীঘিনালা গ্রীণলাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ভালো কথা। একজন নারী রোগীর প্রাইভেসি মেইনটেনেন্স কতটা করছেন?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আরেক ব্যবহারকারী লিখেন— ‘গ্রীন লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেটারনিটি ক্লিনিক (দীঘিনালা), তাদের প্রতিষ্ঠানকে প্রোমোশন করতে গিয়ে একজন নারীর সম্মান জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে, একজন রোগীর ওটির আপত্তিকর ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় এভাবে প্রকাশ করা কতটা অবক্ষয়? দুইজন পুরুষ সহকর্মী (চিকিৎসক) এখানে উপস্থিত আছেন এবং খুব নগ্ন ভাবেই আছেন।’
এসময় তিনি এমন অবক্ষয়ের চর্চা গ্রীন লাইফ ডায়াগনস্টিক কিভাবে করে জানতে চেয়ে তিনি প্রশাসন ও জ্ঞানীদের কাছে প্রশ্ন রাখেন।’
এ বিষয়ে গ্রীণ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড মেটানিটি ক্লিনিকের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ জাফর আহম্মেদ বলেন, গতকাল আমাদের সফল ০৪টি অপারেশন হয়েছে, এরমধ্যে একটি নারী রোগীর ফোঁড়া অপারেশন শেষ হলে বহুল প্রচারের স্বার্থে দুইটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করা হয়,পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য আসতে শুরু করলে পোষ্টটি সরিয়ে, ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়ে পোষ্ট করা হয়।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ডিসিপ্লিনারি কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহতেশামুল হক চৌধুরী বলছেন, ‘এথিকস’ অনুযায়ী রোগীর গোপনীয়তা সুরক্ষার দায়িত্ব চিকিৎসকের, তিনি সেই শপথ নিয়ে থাকেন। সেটার লঙ্ঘন হলে রোগী অভিযোগ করতে পারেন।’
রোগীদের গোপনীয়তা রক্ষা করা এথিকসের মধ্যেই পড়ে, কোনভাবেই এটার ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। এথিকসের বাইরে কেউ কাজ করে থাকলে সেটা তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তনয় তালুকদার বলেন, ‘রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষাকরা চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের সেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা ও আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’