রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির বর্বরোচিত হামলা, হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এর প্রতিবাদ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি:: গেল ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং রোজ শুক্রবার সকাল ১০:৩০ ঘটিকার সময় রাঙ্গামাটিতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় উগ্র সাম্প্রদায়িক বাঙালী কর্তৃক সংঘটিত বর্বরোচিত হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন’ কর্তৃক রাঙ্গামাটির জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণ হতে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়ে বনরুপা পেট্রল পাম্প এলাকায় পৌঁছলে বিএম মার্কেট পার্শ্বে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংঘবদ্ধভাবে থাকা উগ্র বাঙালীদের মধ্য থেকে কে বা কাহারা ইট ছুঁড়লে মূহুর্তে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার সূচনা হয়।
পরবর্তীতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এক বাঙালী কর্তৃক মসজিদ লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়লে জানালার কাঁচ ভেঙে গেলে এর দায় আদিবাসীদের উপর চাপিয়ে দিয়ে কাঠালতলির মৈত্রী বিহার, ত্রিদিব নগর, হ্যাপী মোড়, কালিন্দীপুর, আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়, বিজন স্মরণী, দক্ষিণ কালিন্দীপুর ও হাসপাতাল এলাকায় দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাসা-বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে কালামনি চাকমা (২০) নিহত, অন্ততপক্ষে ৫৩ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়াও ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে, দীঘিনালায় হামলার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর, নারানহিয়ে এলাকায় একদল জুম্ম আদিবাসী ছাত্র-যুবক সড়ক অবরোধ করে বলে জানা যায়। এসময় সেখানে সেনবাহিনীর একাধিক পেট্রলিং টিম উপস্থিত হয়। এতে সামান্য দূর থেকে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী সেখানে গুলিবর্ষণ করে বলে জানা যায়। অপরদিকে, উত্তেজিত জুম্ম ছাত্র-জনতা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রায় ২০জন জুম্ম ছাত্র-যুবক গুরুতর আহত হয়।
আহতদের চিকিৎসার জন্য হসপিটালে নেওয়া হলে প্রথমে জুনান চাকমা (২০)কে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুবেল ত্রিপুরা মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়াও দীঘিনালায় সাম্প্রদায়িক হামলায় গুরুতর আহত ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) খাগড়াছড়ি সদর হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
বস্তুতপক্ষেঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনের দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছরেও রাষ্ট্র কর্তৃক মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এমন বর্বরোচিত হামলার ঘটনা বার বার সংঘটিত করে ফায়দা লুটছে বলে মনে করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি।
তাই অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবী জানাচ্ছে। এই ধরণের অনভিপ্রেত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাশাপাশি উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলার শিকারে আহত ও নিহতদের পরিবারবর্গ, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছে।
এই ধরণের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সরকার তথা সাধারণ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ ও জোরালো ভূমিকা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছে।
সর্বোপরি, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে সংঘটিত উগ্র সাম্প্রদায়িক ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতকরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ দাবী জানান।