সিনিয়র স্টাফ রিপাের্টার,খাগড়াছড়ি:: খাগড়াছড়িতে চলতি সপ্তাহজুড়ে (শনিবার থেকে) টানা বর্ষণের পর বুধবার দুপুর নাগাদ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বানভাসি মানুষ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার বিষয়ে আশান্বিত হয়েছিলো। কিন্তু বুধবার রাতভর আকাশভাঙা ভারী বৃষ্টি এবং উজানের পানি নেমে প্লাবিত হয়েছে খাগড়াছড়ি শহরের নতুন নতুন এলাকাও।
আবারোও নির্মাণাঅঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়েছে সহস্ত্রাধিক পরিবার। এ নিয়ে চারবার ডুবলো চেঙ্গি ও মাইনি নদীর নির্মাণাঅঞ্চলের সহস্ত্রাধিক পরিবার। বৃহস্পতিবার ভোর হতে না হতেই পানির তীব্রতা এতোটা বেড়েছিলো মুহুর্তেই বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি ঢুকে যায়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি: জেনারেল শরীফ আমান হাসান এবং সদর কমান্ডার লে: কর্ণেল আবুল হাসনাত জুয়েল; সশরীরে মাঠে নেমে পড়েন। তাঁরা বেশকিছু এলাকায় আটকেপড়া শিশু-নারী ও বয়োবৃদ্ধ মানুষকে নৌকায় করে নিরাপদস্থানে সরিয়ে আনেন।
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরাও জেলার সবকটি উপজেলার বন্যাক্রান্ত এবং পানিবন্ধী মানুষকে উদ্ধারের সাথে সাথে পৌঁছে দিচ্ছেন সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি ও দাতা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ত্রাণ সামগ্রীও।
দুপুর নাগাদ সরেজমিনে, খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়কে পানিতে সয়লাব দেখা গেছে। চেংগী নদীর পানি বুধবার কমে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে পরিবারগুলো থেকে ঘরে ফিরে গিয়ে ঘরপরিষ্কার কাজে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু রাতের প্রচন্ড ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সকাল বেলায় উঠে দেখে আবারোও পানি।
ফের আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান হয় পরিবারগুলোর। পৌরসভার মহিলা কলেজ সড়ক সবজি বাজার, গঞ্জ পাড়া, গরু বাজার, শান্তিনগর, শব্দ মিয়া পাড়া সড়ক, মুসলিম পাড়া, সহ সাতটি সড়ক পানিতে তৈতই করছে।সাজেক সড়ক ৩ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
নতুন করে সড়ক ডুবেছে খাগড়াছড়ি গেইট, কলেজ রোড, মহালছড়ি সড়ক, দীঘিনালা লংগদু, বাঘাইছড়ি সাজেক সড়ক। জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার এলাকার তাইন্দং তবলছড়ি সহ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। একইভাবে পানছড়ি উপজেলার উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। দীঘিনালা উপজেলার মাইনি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে মেরুং ইউনিয়নের নিচু এলাকার বেশিরভাগ গ্রাম পানিতে নিম্মজ্জিত।
শহরে খাগড়াছড়ি পৌরসভার পাশাপাশি জেলা বিএনপি ও খাগড়াছড়ি মানবকল্যাণ সংস্থা সহ বিভিন্ন সংগঠন এখন বন্যার্তদের মাঝে খিচুড়ি শুকনা খাবার বিতরণ করছে।
পানিবন্দী সাধারণ মানুষরা জানান, বারবার শহরের মধ্যে পানি উঠার কারণ হচ্ছে নদী-নালা, খাল, ড্রেন সংস্কার না করার ফলে। আর টানা যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ হতো না।
খাগড়াছড়ি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সা: সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ্ জানান, যুব রেড ক্রিসেন্ট’র সব কর্মীরা বানভাসি মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করছে। সোসাইটির জাতীয় অফিসে জরুরীবার্তার মাধ্যমে জেলার মানুষের দুর্যোগ কবলিত হবার ভয়াবহতা জানানো হয়েছে। যদি কেন্দ্র থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হয়, তা খুব কম সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্যেঁছে দেয়া হবে।
পৌর প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) নাজমুন আরা সুলতানা জানান, খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী মানুষের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছেন। খাগড়াছড়ির ১০৯ টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। এবং পাহাড়ের পাদদেশে যাদের বসবাস তাদেরকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সহিদুজ্জামান জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো জেলার জন্য ৪০০শত মেট্রিক টন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার জন্য ১২ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৫শত ৫০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের জন্য শুকনো খাবার মজুদ রাখা আছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে।