সব
facebook raytahost.com
দুদকের কব্জায় সাবেক শতাধিক এমপি-মন্ত্রী | Protidiner Khagrachari

দুদকের কব্জায় সাবেক শতাধিক এমপি-মন্ত্রী

দুদকের কব্জায় সাবেক শতাধিক এমপি-মন্ত্রী

ডেস্ক রিপাের্ট:: শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নড়েচড়ে বসছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তখন দুদক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এবার সংস্থা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সরকারের সাবেক ও বর্তমান পদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাচ্যুত সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি। এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

এরই মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাভেদ), ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা পুলিশ) হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে হারুন অর রশীদসহ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। যাতে তারা দুর্নীতিলব্ধ টাকা তুলতে না পারেন।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিযোগ নিয়ে কমিশনে পদ্ধতিগত বিষয় এবং গোয়েন্দা উইংয়ে কাজ চলছে। সেখানে তাদের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদসহ তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধান টিমে আরও রয়েছেন, দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদিন, সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম ও মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন।

এ ব্যাপারে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান ও তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ দিতেন। আসাদুজ্জামান খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করা হতো।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সদ্য সাবেক ৬৫ মন্ত্রী-এমপির অকল্পনীয়ভাবে সম্পদবৃদ্ধির অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে রোববার (১৮ আগস্ট) সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। তার চিঠিতে দেওয়া তালিকায় সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক, সাবেক বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামসহ অনেকের নাম রয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের সম্পদ ৫ থেকে ১৫ বছরের ব্যবধানে ১২৯ শতাংশ থেকে ২ লাখ ৪৩ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে তার মালিকানাধীন কোম্পানি প্রায় ২০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড (২৭৭০ কোটি টাকা) মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি কিনে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। যুক্তরাজ্যের কোম্পানি হাউস করপোরেট অ্যাকাউন্ট, বন্ধকি চার্জ এবং এইচএম ল্যান্ড রেজিস্ট্রি লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে এ পরিসংখ্যান পেয়েছে বার্তা সংস্থা ব্লুমবার্গ।

সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচারের টাকায় গড়েছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কিনেছেন ফ্ল্যাট। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রে তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ৯ ফ্ল্যাট। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার শুরু করেন। দেশটিতে নাহার ম্যানেজমেন্ট ইনকরপোরেটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময় এই প্রতিষ্ঠানের নামে ৯টি প্লট বা ফ্ল্যাট কেনেন। এ ছাড়া তার নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৬ ফ্ল্যাট বেচাকেনার রেকর্ডও রয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে তার স্ত্রী রুখমিলা জামান ও মেয়ে জেবা জামানের নামেও কোম্পানি রয়েছে। পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও একটি কোম্পানি রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ : গত ২৭ জুন ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে দুদকে চিঠি দেন সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবী। ওই আবেদনসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগ জমা হয় দুদকে। যা যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে গাজীপুরে দেড় একর জমি, আফতাবনগরে ৬ কাঠা প্লট, পুলিশ হাউজিং আবাসিক এলাকায় ৬ কাঠা, পূর্বাচলে ৩ কাঠা, একই এলাকায় ৫ কাঠার প্লট ও সাভারে ২ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। অন্যদিকে তার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা ভবন, ইস্কাটন গার্ডেন ও ধানমন্ডিতে দুটি আলিশান ফ্ল্যাট। এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় আফরোজা জামানের নামে প্রায় ১১০ শতাংশ জমি, ঢাকার জোয়ারসাহারা এলাকায় ৫৪ শতক জমি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ণ স্বপ্ন নিলয় টাওয়ারে ৪ হাজার বর্গফুট ফ্ল্যাট ও মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় প্লট রয়েছে। আর ছেলে আসিফ মাহাদিনের নামে নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার ট্রিপ্লেক্স বাড়ি এবং আফতাবনগরেও তার নামে ৫ কাঠা প্লট রয়েছে। এ ছাড়া আসাদুজ্জামার মিয়ার স্ত্রীর নামে পরিবহন ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ : ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন শতকোটি টাকার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে এক বিলাসবহুল প্রমোদাগার। জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। দুদকের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা।

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। পুলিশের আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুনের প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা ছিল অন্যদের থেকে দখল করেছেন বলে অভিযোগ।

এ ছাড়া গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময় থেকেই হারুন তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ির পাশের হাওরে জমি কিনতে শুরু করেন। নামে-বেনামে কমপক্ষে ১০০ একর জমি রয়েছে তার ও তার পরিবারের। সেই সঙ্গে অন্যের অন্তত একশ একর জমিও তিনি দখলে নিয়েছেন। এমনকি দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রেও হারুনের কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে তার নামে জমি ও রিসোর্ট রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর ৬৫ সাবেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন। তিনি সচেতন নাগরিক এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে চিঠিতে বলেন, সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আয় বেড়েছে সীমাহীন।

আপনার মতামত লিখুন :

এর আরও খবর
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম গ্রেপ্তার

বিগত ১৬ বছরে বিদেশে পাঁচার করা হয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকা

বিগত ১৬ বছরে বিদেশে পাঁচার করা হয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকা

আত্মপ্রকাশ হচ্ছে যাচ্ছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’

আত্মপ্রকাশ হচ্ছে যাচ্ছে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’

চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবেনা বিএনপিতে

চাঁদাবাজ-দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবেনা বিএনপিতে

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান

শিক্ষার্থীদের ক্লাস-ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান

হাইকোর্টের নির্দেশে খুলছে ‘শীর্ষ নিউজ ডটকম’

হাইকোর্টের নির্দেশে খুলছে ‘শীর্ষ নিউজ ডটকম’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈকত হাসান
বার্তা সম্পাদক : মো: আল মামুন সিদ্দিক
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।
ফোনঃ ০১৮৩৮৪৯৯৯৯৯
ই-মেইল : protidinerkhagrachari@gmail.com
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। Design & Developed By: Raytahost .com