পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের বিশাল গণসমাবেশ ও বিক্ষোভ
স্টাফ রিপাের্টার:: পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিশাল গণসমাাবেশ বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই ২০২৪) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের চেঙ্গী স্কোয়ারে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসমাবেশে জনস্রােত নামে বিভিন্ন উপজেলা থেকে।
সকালে প্রধান মিছিলটি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা মাঠ থেকে চেঙ্গী স্কোয়ারে গণসমাবেশে মিলিত হয়। তার আগে বাস টার্মিনাল থেকে একটি মিছিল চেঙ্গী স্কোয়ারে পৌছায় এবং সেখানে মিছিলকারীরা সিএইচটি রেগুলেশন বাতিল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। অন্যদিকে গণসমাবেশ চলাকালে ডিসি অফিস এলাকা থেকে শাপলা চত্ত্বর, মহাজন পাড়া হয়ে অপর আরো একটি মিছিল চেঙ্গী স্কোয়ারে সমাবেশে এসে মিলিত হয়।
গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ-এর সংগঠক লালন চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কনিকা দেওয়ান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি শোভা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শান্ত চাকমা।
বক্তারা বলেন,সরকার ঘুম পাড়ানির গান শুনিয়ে পাহাড়িদের নিধন করার পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে। পাহাড়িদের ন্যুনতম অধিকারের রক্ষাকবচ সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের ষড়যন্ত্র করছে। তাই পাহাড়ে উত্তাল আন্দোলন গড়ে উঠছে। মুঘল আমলে লড়াইয়ের বীরত্বসূচক কামান সংরক্ষিত রয়েছে চাকমা রাজবাড়ীতে। ভবিষ্যতেও পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে পূর্ণস্বায়ত্বশাসন আদায়ের জন্য সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।
প্রত্যেক জাতিকে রক্তের বিনিময়ে সংগ্রাম করে অধিকার আদায় করতে হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকেও স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। ৬০-এর দশকে কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। সেই থেকে পাহাড়ে ভুমি বেদখল শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে ইচ্ছামত আইন বানিয়ে পাহাড় ও সমতলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহকে দমন করার হীন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের প্রান্তিক থেকে আরো প্রান্তিকীকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
এতে আরো অভিযোগ করা হয়, জেএসএসের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখার নীতিকে সমালোচনা করে বলেন, ১৯০০ সালের আইন পুনর্বহালের দাবিতে ইউপিডিএফ যখন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন করছে তখন জেএসএস উল্টো পথে হেঁটে ইউপিডিএফের ওপর সশস্ত্র হামলা করার চেষ্টা করছে। সিএইচটি রেগুলেশন আইন পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন না করে জাতবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বাতিলের যে ষড়যন্ত্র তা অবিলম্বে বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়তশাসন প্রদানের দাবি জানান। এছাড়া বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি স্বৈরাচারী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিনিয়ত সহিংসতার কারণে পাহাড় ও সমতলে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে। অন্যায়কারীদের প্রশ্রয় দিয়ে কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করে হত্যা করছে। সারাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ফলে পাহাড় ও সমতলে যে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে
তিনি আরো বলেন, ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনে পাহাড়িদের জন্য ভুমি অধিকার ও প্রশাসনিক কিছু স্বতন্ত্র ক্ষমতা ছিল। কিন্তু বিএনপি সরকার ২০০৩ সালে আদালতকে ব্যবহার করে এই রেগুলেশনকে মৃত আইন বলে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত এই আইনকে বৈধ ঘোষণা দেয়। এরপর ২০১৮ সালে দু’জন সেটলার বাঙালির উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশনের প্রেক্ষিতে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের এটর্নি জেনারেল তা গ্রহণপূর্বক আইনটি বাতিলের ষড়যন্ত্র করছেন। সরকারের যোগসাজশ না থাকলে এটর্নি জেনারেল এটা করতে পারতেন না। বক্তারা, সিএইচটি রেগুলেশন বলবৎরেখে পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে ধ্বংস করতে মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ আমলেও যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সে সরকার একের পর এক গণহত্যা সংঘটিত করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ডজনের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। আর এখন সিএইচটি রেগুলেশন বাতিলের মাধ্যমে পাহাড়িদের ন্যূনতম যে প্রথাগত অধিকার রয়েছে তাও শেষ করতে দিতে চাচ্ছে।
তিনি প্রাকৃতিক সম্পদ হরন, সীমান্ত সড়কে ও উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের ভুমি বেদখল করা হচ্ছে অভিযোগ করে সরকারের এই নীলনক্সার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯০০ সালের রেগুলেশন আমাদের রক্ষাকবচ। রাজা, হেডম্যান, কার্বারী প্রথা বাতিলের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। এই আইন বাতিল হলে পাহাড়িদের ন্যুনতম অধিকারও খর্ব হবে এবং পাহাড়ে ভুমি বেদখলের ষড়যন্ত্র, নারীর ওপর সহিংসতা, কল্পনা চাকমা অপহরণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। অপরাধী চিহ্নিত হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি না হওয়ায় আইন বাতিলের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সারাদেশে যখন কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রসমাজ রাজপথে রক্ত দিচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি উষাতন তালুকদার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। উত্তাল আন্দোলনে পাহাড় ও সমতলে ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অস্বীকার করে সরকারের পা চাটা গোলামের মত আচরণ করছেন বলে উল্লেখ করে ক্ষােভ প্রকাশ করে বক্তারা।
গণসমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার যদি তার আদালতকে ব্যবহার করে এই আইন বাতিল করে দেয় তাহলে পাহাড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।