ডেস্ক রিপোর্ট:: পাহাড়ের বাহারি ফলে ঢাকায় জমেছে মেলা। নানা রঙের,নানা স্বাদের ফলে জমে উঠেছে এই মেলা। কলার নাম সূর্যমুখী। মেঝের ওপর কাঁদি কাঁদি লাল রঙের সুস্বাদু এই কলা স্তূপ করে রাখা। মোচা অবস্থায় এরা সূর্যমুখী ফুলের মতোই সকাল থেকে সূর্যের গতিপথের দিকে ফিরে থাকে। বিশেষ রঙ আর বৈশিষ্ট্যের কারণে এ জাতের কলার নামকরণ করা হয়েছে সূর্যমুখী কলা।
আরও আছে চম্পা ফল। আকারে বাতাবি লেবুর মতো বড় সবুজ রঙের মসৃণ আবরণের এই ফল নজর কাড়ে প্রথম দর্শনেই। আছে বেতের বড় বড় ঝুড়ি ভর্তি রাম্বুটান, লংগান, আনারস, রাঙগুই আম, চিয়াংমাই আম, কিং অফ চাকাপাদ আম, লাল ড্রাগন ফল, বড় আকারের লটকন, পাকা পেঁপে, কাউফল, পেয়ারা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের রসালো ফল।
তবে এসব সুস্বাদু ফল কেউ কিনতে চাইলেই রাজধানী ঢাকার বাজারে খুঁজে পাবেন না। কারণ এসব ফলের বিশেষত্ব হলো এগুলো বৃহত্তর বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সমতলের বেড়ে ওঠা কেমিক্যালযুক্ত ফল নয়, বরং সুদূর সবুজ পাহাড়ের প্রাকৃতিক তরতাজা ফল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীতে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী পাহাড়ে উৎপাদিত ফলের মেলা। যান্ত্রিক শহরের বুকে এ যেন এক টুকরো পাহাড়ের চিত্র। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে করা হয়েছে এ মেলার আয়োজন। চলবে আগামী ১২ জুলাই শুক্রবার পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই মেলা।
শনিবার মেলায় ঘুরে দেখা যায় স্টলভর্তি থরে থরে সাজানো স্বাদে গুণে ভরপুর এসব ফল। পাহাড়ি ফলের স্বাদ ও গন্ধের টানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন নানা বয়সী শত শত মানুষ। বেলা ১১ টায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে মেলা উদ্বোধন করার পরপরই মানুষ ভিড় করে কিনে নেন পাহাড়ি এসব ফল।
স্টলভেদে এসব ফল মান ও আকৃতির উপর ভিত্তি করে বিক্রি হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। সূর্যমুখী কলা স্টলভেদে ২৫০-৩০০ টাকা ডজন, পাহাড়ি বড় জাতের লটকন ১০০-১২০ টাকা কেজি, চম্পা ফল সাইজ অনুযায়ী ১০০-১৫০ টাকা, পাহাড়ের জনপ্রিয় ও সুস্বাদু আম রাঙগুইর কেজি ১০০-১২০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ২৫০ টাকা, চিয়াং মাই ৬০০ টাকা, কিং অব চাকাপাদ আম ৮০০ টাকা, পাহাড়ি ড্রাগন ফল ৪০০ টাকা, পাহাড়ি পেঁপে ১০০-১২০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ১৫-৪০ টাকা, রাম্বুটান ৪০০ টাকা কেজি। বিভিন্ন ফল বিভিন্ন দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এগুলো ছাড়াও রয়েছে পাহাড়ে উৎপন্ন ঐতিহ্যবাহী বিন্নি চাল, জুমের চাল, বাঁশের কোরাল, জুমের মিষ্টিকুমড়া, পাহাড়ি কাজুবাদাম, আচার, পাহাড়ি মরিচ, পাহাড়ি মধু, চিংড়ির বালাচাও, পাহাড়ি নারিকেল, তেজপাতা, শুকনা রোজেলাসহ নানারকম পাহাড়ি খাবার।
অনুমা বনরূপা ফলভাণ্ডারের বিক্রেতা সুদীপ্ত চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ি এসব ফলের স্বাদ,গুণ ও গন্ধ সমতলের ফলের চেয়ে অনেক ভিন্ন। এসব ফল সম্পূর্ণ বিষমুক্ত আর টাটকা। কিছু কিছু ফল আছে, যেগুলো সমতলের চেয়ে পাহাড়ি মাটিতে বেশি ভালো হয়।’ আবার কিছু ফল আছে যেগুলো পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় লোকজন ছাড়া দেশের অন্য এলাকার মানুষ চেনেন না। এই পাহাড়ি ফল মেলায় তার অংশগ্রহণ করার উদ্দেশ্য, পাহাড়ি ফলগুলোকে দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা।
মিনাক্ষী স্টোরের মিনাক্ষী চাকমা বলেন, ‘পাহাড়ের মানুষের খাদ্যাভ্যাস আর চাষ পদ্ধতি দেশের অন্যান্য জায়গার মানুষের চেয়ে অনেক ভিন্ন। আমাদের পাহাড়ের জুমের চাল, বিন্নি চাল, জুমের মিষ্টিকুমড়া, বাঁশের কোরাল, পাহাড়ি মধু যে কেউ চাইলেই সহজে সংগ্রহ করতে পারে না। পাহাড়ি এলাকা ছাড়া অন্য বাজারে এসব পাওয়া যায় না। কিন্তু এ মেলায় এসে যে কেউ চাইলে সহজেই এগুলো কিনতে পারবেন। আমরা চাই আমাদের পাহাড়ি সংস্কৃতি ও খাবার সম্পর্কে মানুষ জানুক।’
মেলায় এসে পাহাড়ের জনপ্রিয় রাঙগুই আম কিনছিলেন সরকারি চাকরিজীবী ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, পাহাড়ি আবহাওয়া, মানুষ আর প্রকৃতির মতো পাহাড়ের ফলগুলোও অসাধারণ। কিন্তু ঢাকার ভেতর চাইলেও তো এসব ফল পাওয়া যায় না বা চাইলেই সহজে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া যায় না। তাই মেলা থেকেই অপূর্ব স্বাদের এসব ফল কিনছি। বাসায় বাচ্চাদের পাহাড়ি ফলের স্বাদ ও গুণের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাবে।