স্টাফ রিপাের্টার:: বান্দরবানে পাহাড়ের ভাজে ভাজে সুবাস ছড়াচ্ছে পাকা আনারস। জেলার থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি ও চিম্বুকে প্রতিটি পাহাড়ের ঢালে এখন শোভা পাচ্ছে আনারস। আকারে বড়, রসালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে আনারস। ফলন ভালো ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি জুমিয়ারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার দুর্গম থানচি, রোয়াংছড়ি সদরের চিম্বুক লাইমিপাড়া ফারুক পাড়া শৈলপ্রপাত, গৈশ্যমনিসহ সবগুলো পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে আনারস। প্রতিটি পাহাড় পাকা আনারসে ছেয়ে গেছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা এবং মে-জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয়। আর কাঁধে থুরুং নিয়ে বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী এসব আনারস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। সেই আনারস বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাট বাজার ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
এছাড়াও পাইকারি বিক্রেতারা বাগানে গিয়ে আনারস ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গা পরিবহন করে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ আনারস আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে ভালো। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। শুধু তাই নয় পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস সরবরাহ হচ্ছে চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হয় চাষিরা।
সদর উপজেলার লাইমি পাড়ার এলাকার আনারস চাষি জিংকুম বম বলেন, এ বছর আনারসের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। আমাদের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস অন্যান্য জেলার আনারসের চেয়ে অনেক ভালো। খুবই মিষ্টি, রসালো ও আকারে বড় হওয়ায় পাইকাররা বাগানে এসে আনারস ক্রয় করে নিয়ে যায়।
ফারুক পাড়া এলাকার আরেক কৃষক সানতোয়াল বম বলেন, এ বছর ছয় একর আনারসের বাগান করেছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামো মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য চাষের চেয়ে আনারস চাষে পরিচর্যা তেমন একটা না করলেও চলে। অনেক সময় একই জমিতে দুবার ফলনও পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন আনারস আকারে বড়, রসালো এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত আনারসের চাহিদাও রয়েছে বেশ।
তিনি আরও, ফলন বাড়াতে আনারসচাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখানে আনারসসহ মৌসুমি ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এসব পণ্য অনেক সময় কম মূল্যে বিক্রি দিচ্ছেন চাষিরা। তাই যাতে আনারস সংরক্ষণের মাধ্যমে আনারস থেকে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় সেক্ষেত্রে কৃষকরা অধিক লাভবান হবে বলে মনে করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।