উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: খাগড়াছড়িতে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ * সরব প্রার্থীরা ছুটছেন শহর থেকে প্রত্যান্ত এলাকায় * শেষ নেই জল্পনা-কল্পনা *
আল-মামুন:: নির্বাচনী প্রচারণায় জমে উঠছে খাগড়াছড়ি। চলতি মাসের ২১ই মে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে জমে উঠছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দ্বিতীয় ধাপে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে হচ্ছে খাগড়াছড়ি উপজেলা পরিষদের যোগ্য চেয়ারম্যান তা নিয়েই যেন উৎসাহের শেষ নেই ভোটারদের মধ্যে।
অন্যদিকে পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নিয়েও হিসাব কসছে ভোটাররা। প্রচারনার হাওয়া পাল তুলে ছুটছে জেলা শহরে অলিগলি ছাড়িয়ে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত জনপদেও। পাড়া-পাড়ায়,চাঁয়ের দোকানে আড্ডায় কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিয়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের চেয়ে বেশি উৎসাহ মিলছে ভোটারদের মধ্যে। প্রার্থীরা তাদের পছন্দের প্রতীক নিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ৩ নারী প্রার্থী মাঠে লড়ছেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে (আনারস) প্রতীক নিয়ে দিদারুল আলম,(মোটর সাইকেল) প্রতীকে আকতার হোসেন, (কই মাছ) প্রতীকে জ্ঞান রঞ্জন ত্রিপুরা, (টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে সুশীল জীবন ত্রিপুরা, (দোয়াত কলম) প্রতীকে সন্তোষিত চাকমা বকুল ও নজরুল ইসলাম ইসলাম (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছে। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে মো: আসাদ উল্লাহ (বই), মো: এরশাদ হোসেন (চশমা),ক্যউচিং মারমা (তালা),শাহাব উদ্দিন সরকার (টিউবওয়েল),মো: আবু হানিফ (টিয়াপাখি)। মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানদের মধ্যে, কল্যাণী ত্রিপুরা (কলস) নিউসা মগ (প্রজাপতি),নিপু ত্রিপুরা (ফুটবল) মাঠে লড়ছেন।
এখানে পাহাড়ি-বাঙালী ভোটারের সংখ্যার হিসাব নিকাশ এবার বেশ জটিল। একাধিক বাঙালি ও একাধিক পাহাড়ি প্রার্থী হওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় জয় নিশ্চিত করতে হলে হিসাব মেলাতে হবে সাবধানে। তাই ভোটারদের মুখে মুখে শোভা পাচ্ছে “এখানে গোপন অঙ্কের সূত্রেই লুকিয়ে আছে বিজয়ের হাতছানী”। যোগ্যতাই নির্বাচিত করবে প্রার্থীদের এমনটাই দাবী সচেতন খাগড়াছড়িবাসীর। কারো কোন প্রতিশ্রুতিতে নয়,যোগ্যতা বিবেচনায় প্রাধান্য পাবে বলে বলছেন তরুণ ভোটাররা।
উৎসবের আমেজের এ নির্বাচনে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে যোগ্য প্রার্থীর আলোচনা। উঠান বৈঠকে স্থান পাচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থী-ভোটাররা বিগত দিনগুলোর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব শুরু করেছে অনেক আগে থেকেই। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে এবার প্রচারণার গণজোয়ারে ভাসছে হেভিওয়েটরা। প্রশ্নের জটিল সমীকরণে দীর্ঘ ভাবণায় উন্মোচিত হবে যোগ্যরা এমনটাই দাবী নাগরিক সমাজের। এই নির্বাচনের জয়ে শতভাগ আশাবাদী সকলেই,তবে পরাজয় কার?
ভোটাররা বলছে,প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়ের পর উদাও প্রার্থীদের জয় নয়, বরং বর্জন করবে সচেতন ভোটাররা। বিজয় নিশ্চিত করতে ভোট আসলেই নানা কল্পনা আর আশার বাণী শোনানো প্রার্থীদের আর ভোট নয়,এবার বর্জন করে শিক্ষা দেয়ার পথে হাটবেন বলে মত প্রকাশ করেন একাধিক ভোটার। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় প্রত্যাশিত উন্নয়নে যোগ্য নেতার হাত ধরে উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দিতে সব ভোটারা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের প্রাণের দাবী পুরণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সকল ভোটারদের। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। জেলা শহর থেকে প্রত্যান্ত এলাকায় শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার।
এদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে চেয়ারম্যান পদে নিয়ে আলোচনা। দলের নেতাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যু,পর্দার আড়ালের কলকাঠি নাড়ানোর নানা মুখোরোচক গল্প। এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম আনারস প্রতীক নিয়ে গণজোয়ার বইছে মাঠে। তবে তার সে জয়ে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে মাঠে অপপ্রচার ও নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে একটি বিশেষ কুচক্রি মহল।
স্থানীয়রা বলছে এসব ষড়যন্ত্রের অন্তরালে রয়েছে দিদারুল আলম দিদার এর এক সময়ের সহযোদ্ধায় প্রতিহিংসা নিয়ে মাঠে খেলছে। এতো ষড়যন্ত্র মাথায় নিয়ে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তিনি।
এদিকে খাগড়াছড়িতে ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দিদারুল আলম পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও রাজনীতির বাইরেও সামাজিকভাবে তার পরিচিতি সাদা মনের মানুষ হিসেবে। আওয়ামীলীগের রাজনীতির একনিষ্ঠ নেতা হলেও রাজনীতি শক্ত অবস্থানে থাকা দিদারুল আলম ষড়যন্ত্রের কারণে কোণঠাসা। একটি পক্ষ আলম পরিবারকে মাইনাস করতে দিদারুল আলমকে মাঠের নেতৃত্বে দূর্বল করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম বলেন, নির্বাচন করছি জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে। জয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন, জনবান্ধব-খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা গঠনের পাশাপাশি সাধারন মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটাতে সকল সম্প্রদায়ের জনকল্যাণে নিজেকে আত্ম নিয়োগ করতে চাই। কথা আর বক্তব্যে নয় মানুষের সেবায় নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন পথে খাগড়াছড়িকে এগিয়ে নেওয়ার কথা জানান এই প্রার্থী।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী (বই) প্রতীকের মো: আসাদ উল্লাহ জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,শিক্ষার ক্ষেত্রে দারিদ্র যেন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে নির্বাচিত হলে সে লক্ষ্যকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে কাজ করবেন তিনি। এ সময় দারিদ্র সিমান মধ্যে বসবাসকারী মানুষকে শহরের সাথে সমান মূল্যায়ন করে উন্নয়নের কাজ করবেন বলে তিনি জানান। একই সাথে তিনি ভোটারদের কাছে নিজেকে তরুণ নেতৃত্বের পথে নবীন ও প্রবীণদের যথাযথ মুল্যায়নে উন্নয়নের প্রতিটি সেক্টরে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নয় বাস্তবে রূপ দিতে চান বলে জানান আসাদ উল্লাহ।
মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী (ফুটবল) প্রতীকের নিপু ত্রিপুরা বলেন, জয়-পরাজয় ভোটারদের হাতে জনগণের আশার প্রতিফলন ঘটাতে কাজ করে চাই। সাধারন মানুষের চাহিদা ও অপ্রাপ্তিকে কাজে লাগিয়ে উপজেলাকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন বলে তিনি জানান।
খাগড়াছড়ি জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জোনায়েদ কবির সোহাগ, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সহিদুজ্জামান প্রার্থীদের,সুষ্ঠ নিরপেক্ষা নির্বাচনের লক্ষে আচরণ বিধিমেনে চলার আহবান জানান। অন্যথাই নির্বাচনে ম্যাজিস্টেটসহ প্রশাসন কাজ করছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে প্রচলিত আইনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুশিয়ারী জানান।
অন্যদিকে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, পুলিশ প্রশাসন নির্বাচনকে সুষ্ঠ করতে মাঠে আছে। সব ধরনের সহায়তা করার পাশাপাশি সুষ্ঠ নির্বাচনে পুলিশ শর্তক রয়েছে বলেও জানান।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আগামী ২১ মে ২০২৪ ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় দীঘিনালা,পানছড়ি ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তার মধ্যে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯২ হাজার ৮শ ৬৪। তার মধ্যে পুরুষ- ৪৭ হাজার ৮শ ৯৫,নারী- ৪৪হাজার ৯শ ৬৯ বলে জানা যায়।