স্টাফ রিপাের্টার:: খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বড়পিলাক এলাকায় মেহেদী হাসান পায়েল নামে এক যুবককে মোটরসাইকেল দিয়ে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে ঘাতকদের ফাঁসীর দাবি জানিয়েছে নিহত পায়েল এর পরিবারবর্গ ও এলাকাবাসী।
বুধবার (১ মে ২০২৪) গুইমারা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এই দাবী জানানো হয়। এসময় পায়েল হত্যার বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরে আবেগ্লাপুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন পায়েল এর মা। গত বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ এ পায়েল হত্যার ঘটনা ঘটে।
মেহেদী হাসান পায়েল এর বড় ভাই রুবেল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে জানান, ঈদের দিন সকালে নামাজ পরে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মোটর সাইকেলযোগে ৫ নম্বরের দিকে রওনা দিলে কিছুদুর আসার পর অপর প্রান্ত থেকে আসা আজিজুল তার মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় ভাওলী মেরে নুর আলমের মোটরসাইকেলে থাকা সবাইকে ভয় দেখায়।
এতে নুর আলম ভয় পেয়ে যায় এবং নুর আলমের মোটরসাইকেলটিসহ সকলের মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়া পরপরই বাকীরা পুনরায় উঠে গেলেও পায়েল উঠার চেষ্টা করার সময় অপর প্রান্ত থেকে আসা আজিজুল রাস্তার রং সাইডে গিয়ে পায়েলের মাথার উপরে মোটরসাইকেল তুলে দেয়। সাথে সাথে আজিজুল, নুর আলমসহ সকলে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। আশেপাশের লোকজন তাদেরকে ডাক দিলেও তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুর্ঘটনা ঘটার পর আজিজুলসহ অন্যান্যরা পায়েলকে উদ্ধার না করে ঘটানাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে আরো বলেন, আজিজুল ইচ্ছা করলেই পায়েলকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতো। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করেন তারা।
পায়েল এর আরেক বড় ভাই মো: সোহেল জানায়, ঘটনাস্থলে পায়েলকে ফেলে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আজিজুল ও নুর আলম আজিজুল এর বোন জামাই আল-আমিন রনির কাছে গিয়ে আশ্রয় চাইলে রনি তাদের কিছুদিনের জন্য পালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলে তোদের কিছুই হবে না। আমি ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে সব সমাধান করে দিব। থানার ওসির সাথে কথা বলবো, দরকার হলে এসপির সাথেও কথা বলে ডিল করবো।
জানা যায়, মোঃ আল-আমিন রনি সাংবাদিকতার পরিচয়ে এলাকায় কিশোর গ্যাং তৈরী করে বিভিন্ন মানুষকে হুমনি-ধমকি দিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও চাঁদাবাজি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ করেন স্থানীয় এক ব্যক্তি।
এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি উন্নয়ন মূলক কাজে বাঁধা দিয়ে নানা বাহানায় চাঁদাদাবি করে এই কথিত সাংবাদিক আল আমিন রনি। তার মদদেই এই পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
পায়েল এর বড়ভাই সোহেল আরো বলেন, পায়েলের লাশ দাফন করার পরের দিন আল-আমিন ধমক দিয়ে বলে, মামলা মোকাদ্দমা করে কিছুই হবে না, এখানে মিমাংসা করে ফেলো। না হয় এক ভাই হারাইছো, তোমাদেরও সমস্যা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় পায়েলের পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে বলে জানায় ভুক্তভোগিরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ জহিরুল ইসলাম জানায়, ঈদের নামাজ শেষ পায়েল এর সাথে এ ঘটনা ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই না। পায়েলের মাথার উপর গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘটনা গুরুতর দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে আমিসহ বেশ কয়েকজন পায়েলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মোঃ মনির হোসেন বলেন, আজিজুল তার মোটরসাইকেলটি নুর আলমের গাড়িতে থাকা পায়েল এর মাথার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এতে পায়েল গুরুত্বর আহত হলে আজিজসহ বাকীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
পায়েল এর শ্বশুর ওসমান গণি বলেন, পায়েলকে বাচাঁনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। পায়েলের লাশ নিয়ে বাসা আশার পর স্থানীয় কথিত সাংবাদিক নামধারী ঘাতকের বোন জামাই আল আমিন রনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে অর্থের বিনিময়ে মিমাংশার প্রলোভন ও বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমক দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।
অর্থের বিনিময়ে মিমাংশা ও পরিকল্পিত হত্যার সাথে জরিতের বিষয়ে আজিজুল ইসলাম এর বোন জামাই আল-আমিন রনির সাথে অনেক যোগাযোগ করেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় কথা বলা যায়নি।