স্টাফ রিপাের্টার:: নতুন নতুন উদ্ভাবন ও আধুনিকায়নে বদলে যাচ্ছে কৃষি ব্যবস্থা। সনাতনী পদ্ধতিতে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর অধিক খরচে চাষাবাদ করে যে পরিমান ফসল উৎপাদন হতো, কৃষিতে আধুনিকায়নে সল্প পরিশ্রম আর অল্প খরচে উৎপাদিত হচ্ছে তার দ্বীগুন ফসল।
এমনি এক আধুনিক ও স্মার্ট চাষ পদ্ধতির নাম মালচিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাহাড়ে পর্যাপ্ত চাষাবাদের প্রচলন না থাকলেও ইতি মধ্যে ইউটিউবের কল্যাণে ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়ের কৃষকরা। এমনি এক সফল কৃষক খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মাস্টারপাড়ার আব্দুর রব।
জানা যায়, মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমে জমিতে পরিমিত রাসায়নিক ও জৈব সার দিয়ে সারি সারি বেড তৈরি করা হয়। পরে সারিবদ্ধ বেডগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। বেডে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির বীজ বা চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর শুধু দেখভাল করা ছাড়া তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
রাসায়নিক ও জৈব সার একসঙ্গে প্রয়োগ করে আবাদকৃত জমি পলিথিনের মালচিং সেড দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এতে অতি বৃষ্টিতেও মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় না। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কৃষকের উৎপাদন খরচও অনেক কম। মালচিং পদ্ধতিতে বীজ ও চারা রোপনের মাধ্যমে এ চাষ করা যায়। বীজের চেয়ে চারা লাগানোটাই উত্তম বলে জানা যায়। মালচিং পদ্ধতিতে রোপনের চারা উৎপাদন করতে প্রথমে সিড লিঙ্ক ট্রে তে পরিমান মত কোকো ফিট দিয়ে বীজ বপন করতে হয়ে।
কোকোফিট হলো এক ধরনের জৈব সার। যা নারিকেলের খোশাসহ মিশ্রীত জৈব উপদান দিয়ে তৈরী করা হয়। বীজ বপনের ১৫ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে উৎপাদিত চারা মালচিং এ রোপন করা হয়। বিশেষ করে শসা ১৫ দিনের মধ্যে মালচিং বেডে রোপন করা হয়। অন্যান্য সবজি চারা ২৫ দিনের মধ্যে রোপন করতে হয়। চারা রোপণের পর তেমন কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
মালচিং পেপার দ্বারা ঢেকে দেওয়ার কারণে ছত্রাক বা রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। জমির পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ হয় খুব কম। এই পদ্ধতিতে ফলন হয় দ্বিগুণ। পরিশ্রম কম হয়। এ পদ্ধতি অনেক সহজলভ্য লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব।
মাটিরাঙ্গা পৌর সভার মাস্টারপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রব জানান, ইউটিউব দেখে ২০২০ সালে কৃষিতে কোন প্রকার প্রশিক্ষন ছাড়া সালে সর্ব পরীক্ষা মুলক ১০ শতক জমিতে ময়না মতি জাতের শসা চাষ করেণ। এতে লাভের পরিবর্তে সম্পুর্ন ক্ষতি হয়। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় এমন ক্ষতির সম্মুখিন হন বলে জানান তিনি।
তবে এতে হাল ছাড়েননি তিনি। পরবর্তীতে ২০২১সালে ২শতক জমিতে পরীক্ষা মুলক একই জাতের শসা, ১শতক জমিতে ক্যাপসিকাম ,২শতক জমিতে তিতা করলা চাষ করে সফলতার মুখ দেখেন তিনি। পরবর্তীতে ২২ সালে একই পদ্ধতিতে ৬ শতক জমিতে টমেটো ২০২৩ সালে ২০ শতক জামিতে আইস গ্রীন জাতের শসা ,দুন্দল, ১০শতক ,করলা ৮শতক, টমেটো ২০শতক জমিতে পরীক্ষা মূলক চাষে সফল হন তিনি।
এ সফলতা থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের উপ সহকারী দেবাশীষ চাকমার সার্বিক নির্দেশনায় ২৪ সালে ৩৩ শতক জমিতে শসা, ১৫শতক দুন্ধল চাষ করেন। ৩৩ শতক জমিতে আইস গ্রীন জাতের শসা চাষে সর্বমোট খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাক। এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন প্রায় আশি হাজার টাকা। এবছর বাজারে শসার ভালো দাম রয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত ১লাখ ৬০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন কৃষক আব্দুর রব।
তিনি আরো বলেন,৪০ শতক জমি প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছরে পরীক্ষামুলক ভাবে মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হবে। কৃষক ওয়ালি উল্লাহ বাবু বলেন, আব্দুর রব ভাইয়ের মালচিং পদ্ধতিতে চাষ আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা পেলে তিনি এ পদ্ধতিতে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিধ সবুজ আলী বলেন,কৃষক আব্দুর রব ইউটিউব দেখে মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করে। প্রথমে পদ্ধতিগত ভুলের কারণে সফল হতে পারেননি তিনি। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট ব্লকের কৃষি উপসহকারি দেবাশীষ চাকমার তত্বাবধানে শসা সহ অন্যান্য সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছি। কৃষি সংক্রান্ত যে কোন জটিলতা নিরসনে সব সময় কৃষকদের পাশে আছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।