স্টাফ রিপাের্টার:: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার উপকন্ঠে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “মাটিরাঙ্গা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়”। মাধ্যমিক পর্যায় উপজেলায় একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এটি। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘসময় প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্যতা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষক সল্পতা সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। যেখানে ডিজিটাল গন্ডি পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পন করলেও সেখানে পরিত্যাক্ত কক্ষে পাঠদান চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে।
এমন অবস্থায় শিক্ষার মানউন্নয়নে অবগকাঠামোগত উন্নয়ন,প্রধান শিক্ষক ও বিষয় ভিত্তিক পদ শুন্যতা সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এবং স্কুলে শিক্ষার্থী আসন ও শাখা বাড়ানোর দাবি অভিভাবদের।
সরজমিনে দেখা যায়, ১৩ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। ছাত্রাবাসগুলো পরিনত হয়েছে ভূতের বাড়িতে । দেখলে শরীর চমচম করে উঠে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য থাকায় একযুগেরও বেশি সময় ধরে সহকারি শিক্ষক দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে আশির দশকে নির্মিত জরাজীর্ণ অবকাঠামোতে চলছে দৈনন্দিন কার্যক্রম।
দপ্তরিক কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দেওয়া টিনসেট কক্ষে। দীর্ঘদিন মেরামতহীন মেঝেতে রয়েছে ফাটল ও অসংখ্য গর্ত । অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাঠদানের ফলে শিক্ষার্থীরা রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারী করণে শিক্ষকরা লাভবান হলেও অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ধুলয় মিশে যাচ্ছে অভিভাককদের স্বপ্ন। হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্য।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, ৯.৭৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত প্রতষ্ঠিানটি ২০১৮ সালে মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাটিরাঙ্গা সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় নাম ও সরকারী করণ করা হয়। সে মোতাবেক ২৮ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক রয়েছে ৯ জন কর্মচারী রয়েছে ৮ জনের স্থলে ৫জন। কোটা থাকলেও নাই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর।
পাশাপাশি কারিগরি (ভোকেশনাল ) শিক্ষা বোর্ডের আওতায় দুটি ট্রেডকোর্চ ( ইলিট্রেশিয়ান ও পারমেশিনারী)র জন্য নাই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ব্যবহারিক পাঠদানে প্রযুক্তিগত উপকরণ না থাকায় চরম ভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। অপর দিকে সভা সেমিনার জন্য অডিটোরিয়াম, মানসম্মত লাইব্রেরি, আধুনিক মানের একাডেমিক ভবন, শ্রেণী ভিত্তিক পাঠদানে বিজ্ঞান ভবনও।
চারদিকে সিমানা প্রাচীর ও মান সম্মত গেইট না থাকায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে স্কুলের জায়গা এবং প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার পর নেশার আড্ডা বসারও অভিযোগ রয়েছে এ শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান এরিয়ায়।
শিক্ষার্থী অভিভাক আলী হোসেন বলেন,বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে যে মানের একাডেমিক ভবন থাকার কথা সেভাবে ভবন নাই। ১৩বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকের পদ শুন্যতা স্বল্পতা শিক্ষা ব্যবস্থা চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি করণের ফলে আসন স্বল্পতার কারণে অনেকেই ভর্তি সুযোগ পায়না। তাই শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী আসন বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
অভিভাবক আবুল হাসেম জানান,বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিনের হলেও অবকাঠামো ঠিক নাই। প্রধান শিক্ষকসহ পর্যাপ্ত শিক্ষক নাই। সব মিলিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় আছেন বলে জানান তিনি।
আরেক অভিভাবক বেলাল হোসেন বলেন, শিক্ষক স্বল্পতায় ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির শিক্ষা পরিবেশ অনেক নড়বড়ে অবস্থা।খন্ডকালিন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। তাছাড়াও রাত্রিকালিন বিভিন্ন নেশা গ্রস্থরা এখানে আড্ডার জমায়। এসমস্ত হতে উত্তরনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন মনে করেন তিনি।
বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১২ সাল থেকে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নাই। রয়েছে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট।২০২২সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর অভিভাকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নামমাত্র বেতনে ৩জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখন স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী শুন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ কারা হবে বলে জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, মাটিরাঙ্গা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় যে কয়জন শিক্ষক নিয়ে জাতীয়করণ করা হয়েছে ,সে কয়টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে যে পদ গুলো বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সৃষ্টি লক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্যাধি প্রেরণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় । ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষারমান উন্নয়নে প্রধান শিক্ষক ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ এবং শাখা ভিত্তিক শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে আরো বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির দাবী স্থানীয়দের।
অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
