স্টাফ রিপাের্টার:: পাহাড়ের খুনোখুনি নতুন কিছু নয়। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর আধিপত্য ধরে রাখতে প্রতিনিয়তই হত্যার তালিকায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এতে করে পাহাড়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত আর নতুন নতুন সংগঠনের।আধিপত্যের এসব খুনোখুঁনি,চাঁদাবাজীকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে ঝরছে তাঁজা প্রাণ। পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজক পরিস্থিতি, হত্যাকান্ড,বেপরোয়া চাঁদাবাজী বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তি চুক্তি) হলেও সে কাঙ্খিত শান্তি ফিরেনী বলে দাবী বিশিষ্ট জনদের।
১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্যাঞ্চলে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সাথে চুক্তি সম্পাদন করে। অন্যদিকে ১৯৯৮ সালে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করে গড়ে উঠে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
এরপর জেএসএস-ইউপিডিএফ নতুন দ্বন্দ্বে পাহাড়ে ঝরতে শুরু করে নতুন রক্তের খেলা। এদিকে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সন্তু লারমার ক্ষোভের মধ্যে পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যেও দেখা দেয় বিভাজন। জেএসএস আবার ভেঙে গড়ে ওঠে জেএসএস (এমএন লারমা গ্রুপ) জেএসএস সংস্কার।
প্রসিত বিকাশ খীসার দল ভেঙে ২০১৭ সালে ১৫ই নভেম্বর গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেকটি সংগঠন। যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেন তপন জ্যোতি বর্মা। পরে পাহাড়ে একের পর এক কয়েক বছরেই বাড়তে থাকে আঞ্চলিক সংগঠনের। সে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রক্তক্ষরণ আর অশান্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রবীন নেতা বলেন,পাহাড়ে হানাহানি ও রক্তপাতের মুলে আধিপত্য। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ের বড় ধরনের সংঘাত অনিবার্য বলেও তিনি দাবী করে শান্তির পথে হাঠার পরামর্শ দেন তিনি।
সচেতন নাগরিকদের দাবী, চুক্তির দীর্ঘ ২৭ বছর পরও এখনো থামেনি অপহরণ,খুন ও আধিপত্যের লড়াই। পার্বত্য চট্টগ্রামে এসব অপহরণ,গুম,বেপরোয়া চাঁদাবাজি,হত্যাকাণ্ড প্রতিনিয়ত ঘটলেও যেন দেখার কেউ নেই। এতো হত্যাকাণ্ডের পরও সুষ্ঠ কোন সমাধান না হওয়ায় ভারী অস্ত্রের বুলেট কেঁড়ে নিচ্ছে পাহাড়ের তরতাঁজা প্রাণ। এসকল হত্যাকাণ্ডের কোন বিচারও মিলেনা পরিবারের পক্ষ থেকে আইনের আশ্রয় চাওয়ার পরও। কারণ এ সব ঘটনার মুল হোতারা থাকেন ধারা-ছোয়ার বাইরে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব হত্যাযজ্ঞ অনিশ্চিত করতে তুলছে পাহাড়বাসীর শান্তি আর সংঘাতের দিকে ঠেঁলে দিচ্ছে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে। ফলে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে করে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশ আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পার্বত্যবাসী।
ইউপিডিএফ এর সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন,পাহাড়কে মেধা শুণ্য করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যাযজ্ঞ চলছে। নব্য মুখোশদের পার্বত্যাঞ্চলে বর্তমানে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রক্তের হলিখেলা চলছে জানিয়ে ১৯৯৭ সালের পর থেকে আজকের (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) ৩৬০জন প্রতিপক্ষের হামলায় হত্যার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি। তার মধ্যে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর হাতে ৩শ ২জন নেতাকর্মী নিহত হয়। এছাড়া এমএন লারমা সমর্থিত জেএসএস এবং মুখোশ বাহিনী সৃষ্টির পর সর্বমোট দু’সংগঠনের যৌথ হামলায় আরো ৫৮ জন নেতাকর্মী শহীদ (আত্ম বলিদান) হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। এ সময় তিনি বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ড চলছে বলে দাবী করেন তিনি।
এদিকে-ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর সাধারন সম্পাদক মিটন চাকমা বলেন, পাহাড়ে প্রসীত নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ জুম্ম জনগণকে আধিকার আদায়ের নামে প্রতারণা করে পাহাড়ে সন্ত্রাসী সংঘাতকে ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীদের হাতে ৮ নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে শফিকুল ইসলাম রাসেল অপহরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঙালীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন নিজ দেশে পরবাসী। শত কোটি টাকার চাঁদায় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজিতে অসহায় পার্বত্যবাসীরা। প্রতিনিয়তই অপহরণ,খুন,চাঁদাবাজির পরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানান।
এদিকে-গুইমারা থানার ওসি মুহাম্মদ আরিফুল আমিন বলেন,সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় নয়। সুনিদিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধ পরিকর। যে সকল স্থানে আঞ্চলিক সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধিসহ যৌথ অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে বলেও এ সময় তিনি জানান।