প্রেস বিজ্ঞপ্তি:: খাগড়াছড়ির পানছড়িতে বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে আন্দোলনকারী পাঁচ সংগঠন। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি ২০২৪) সকালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও পানছড়ি গণ অধিকার রক্ষা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
“যারা খুনিদের রক্ষা করে, আশ্রয় দেয় তারা রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রু” শ্লোগানে সকাল ১১টায় পুজগাঙের মুনিপুর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। শত শত জনতার অংশগ্রহণে মিছিলটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে লোগাঙ বাজারের পাশে লোগাঙ ইউপি কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা খুনিদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পরিণীতা চাকমা, পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য মানেক পুদি চাকমা ও পিসিপির পানছড়ি উপজেলা সভাপতি সুনীল ময় চাকমা।
যুব নেতা বরুন চাকমা বলেন, আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভালো নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্মদের ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১১ ডিসেম্বর বিপুলসহ চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের দায় ফ্যাসিস্ট সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। তিনি নব্যমুখোশ বাহিনী ভেঙে দেয়ার দাবি জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন,পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণসহ রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ অনিল পাড়ায় বিপুল, সুনীল, লিটন রুহিনকে হত্যার ঘটনাও তারই অংশ। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডে মদদ ও সহযোগিতা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি চার নেতা হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও খুনিদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন,জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ জনগণের ওপর ভয়ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। এন্টি চাকমা অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নব্যমুখোশদের মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান।
নারী নেত্রী পরিণীতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা সব সময় নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। আজকের মত এভাবে আমাদেরকে বিভিন্ন নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশে এসে প্রতিবাদ করতে হবে। পানছড়ি গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য মানেক পুদি চাকমা বলেন, আমরা পাহাড়ে শান্তি চাই, শান্তিতে বসবাস করতে চাই। গত ১১ ডিসেম্বর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সেটা খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। আমরা আর এ ধরনের ঘটনা দেখতে চাই না।
তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দিয়ে অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারে-প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে, আজ খুব সকাল থেকে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সন্ত্রাসীরা অপতৎপরতা শুরু করে। সকালে এলাকার লোকজন বিপুল, সুনীলসহ চার নেতা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থান ধর্মঘটের জন্য যেতে চাইলে বাধার কারণে কলেজ গেইট এলাকা থেকে তারা ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
এরপর ৩ শতাধিক নারী বড়হনা এলাকায় গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে এক সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারা বড়হনা ব্রিজ থেকে মিছিল নিয়ে আমতলায় গিয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হন। এতে ইউপিডিএফ সদস্য রাসেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক নিরব ত্রিপুরা ও শংকর চাকমা।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার অনিলপাড়ায় নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, পিসিপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন ত্রিপুরাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডের এক মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসন এখনো খুনিদের গ্রেফতার না করে উপরন্তু তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। পানছড়ি উপজেলা শাখা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ সদস্য সুপ্রিয় চাকমা প্রেরিত বার্তায় এ তথ্য জানান।