নীরব চৌধুরী বিটন:: খাগড়াছড়ি সদরের গুগড়াছড়ি এলাকায় ছয় বছর ধরে আখ চাষ করছেন চাইথৈং মর্গ। এই আখ চাষ করে তিনি ছেলে-মেয়ে পড়া শুনাসহ সংসার চালান। তিনি বলেন, ‘আখ চাষ করে ছোট আকারের বাড়ি করেছি। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছি। অর্থকড়ির দিক দিকে মুটামুটি সচল হয়েছি।’
চাইথৈং মর্গের মতো খাগড়াছড়ি জেলাতে প্রায় দুই হাজার পরিবার আখ চাষ করে সচল হয়েছে। এতে পাহাড়ে প্রতি বছর বাড়ছে আখ চাষ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ২০ হাজার ৩২০ টন আখ উৎপাদিত হয়। এর আগের বছর হয়েছে ২১ হাজার ৫২ টন আখ। ২০১৫-১৬ সালে উৎপাদিত হয়েছিল ১৯ হাজার ৮০০ টন।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, জেলায় বর্তমানে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হচ্ছে। বছরে উৎপাদন ছাড়িয়েছে ২০ হাজার টন। বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার আখ বিক্রি হয়। পাহাড়ে কৃষকদের দিনদিন আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। এখানে একটি আখ চাষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, আখ চাষে কম খরচে অধিক ফলন হয়। ফলে অল্প পরিশ্রমে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। নতুন করে কৃষক আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছে অনেকে। খাগড়াছড়ি সদরে সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়। এরপর মহালছড়ি, দীঘিনালায়সহ বিভিন্ন উপজেলাতে আখ চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ে আখের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে রং বিলাশ জাতের আখ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। আকর্ষণীয় এবং দামেও বেশি পাওয়া যায়।
সদরের সাতভাইপাড়া এলাকার চিবিয়ে খাওয়া আখ চাষি মংরি মারমা বলেন, ২০১২ সাল থেকে আখ চাষ করে আসছেন। এবার ১১০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করছেন। আখ চাষে তেমন রোগবালাই নেই। দশ-বার দিন পর পর আগাছা পরিস্কার করতে হয়। তাছাড়া কোন খরচ নেই। তাই আখ চাষে অনেক অনেক লাভ।
খেজুরবাগান কর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারি কর্মকর্তা সুজন চাকমা বলেন, আখ চাষ একটি অর্থকড়ি ফসল। আখ চাষ করে অনেক চাষি স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। পানছড়ি উপজেলা সড়কে দুই পাশ ছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় আখ চাষ হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে গুড়ও তৈরি হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি আখ চাষ জোরদার প্রকল্পের পরামর্শক দিবাকর চাকমা বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে ৪৮০ হেক্টর আখ চাষ হচ্ছে। আমাদের প্রকল্পে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার কৃষক আখ চাষ করছে। জেলায় আখ চাষ বাড়াতে আমরা চাষিদের প্রশিক্ষণ ও চাষের সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা দিচ্ছি।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা বলেন, ভাইবোনছড়া ও মুনিগ্রাম সদর ইউনিয়নের সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হয়। সদরে ২৫৪ হেক্টর আখ চাষ হয়েছে। আখ দুইবার চাষ করা যায় তা আখ চাষ করার জন্য কৃষকরা আগ্রহী। কৃষকরা গুড় তৈরি করছেন। সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করতে পারেন তাতে কৃষকরা লাভবান হবে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সুগারক্রপ ইনস্টিটিউটের সহায়তায় আখের নতুন জাত চাষাবাদ করছে। এ উৎপাদিক আখ দিয়ে গবেষণা কর্তৃক আবিস্কৃত মেশিনের সাহায্যে কৃষক নিজেই গুড় তৈরি করছেন। কৃষকদের নতুন কর্মসংস্থা তৈরি হয়েছে। আখ এবং আখের গুড় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরে গুড় সরবারহ করছে। ভবিষ্যৎতে এখানে আখ চাষের অপারসম্ভাবনা রয়েছে।