স্টাফ রিপোর্টার:: শীতের শুরুতে এখন পাহাড়ে পর্যটকের ভিড় জমে থাকে। কিন্তু চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের পাহাড়ের রানী খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত শীতের শুরুতে অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপির ডাকা টানা অবরোধের কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছেন খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সাজেক পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নেই পর্যটক, হোটেল বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকরা। প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরুতে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, তারেং, রিসাং ঝরনা,জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, মায়াবিনী লেকসহ জেলার সকল দর্শনীয় স্পটগুলোতে পর্যটকের পথচারনায় মুখরীত থাকে। বিএনপি ডাকা অবরোধে খাগড়াছড়ির সকল পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন ফাঁকা।
হোটেল-রিসোর্ট পর্যটকশূন্য বললেই চলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা অবরোধের কারণে পর্যটন শীত মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা খাচ্ছেন খাচ্ছে। বছরের এই সময়ে খাগড়াছড়ি জেলার সকল পর্যটন স্পটগুলোতে ভিড় করেন সারাদেশ থেকে আসা পর্যটকরা। কিন্তু অবরোধের কারণে সব বুকিং বাতিল করেছেন তারা।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসার পথে গণপরিবহন না পাওয়া ও সড়কে সংঘাত, সংঘর্ষের কথা চিন্তা করে বের হচ্ছেন না ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেওয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের।
আলুটিলা, জেলা পরিষদ পার্কে গিয়ে দেখা যায়, শীতের শুরুতে সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভরপুর থাকার কথা। কিন্তু কোনও পর্যটক নেই। দল বেধে বাইকে আসছেন কয়েক জন। তবে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সব আয়োজন করে রেখেছেন। তারা এখন আড্ডা দিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। খাগড়াছড়ি ও সাজেকে গত ১৪ দিনের হরতাল ও অবরোধে চলছে ঠান্ডা। পর্যটন ঘিরে এখানে গড়ে ওঠা প্রায় ৩০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং নেই। এক মাস ও পনের দিন আগে যারা বুকিং করেছেন তারা এখন বাধ দিচ্ছে।
তেমনই পর্যটক বহনকারী পিকাআপ, চাঁদের গাড়ি (জীপ), সিএনজি, মাহিন্দ্র পাঁচশতাধিক গাড়ির চাকাও প্রায় অচল হয়ে আছে। লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় দুই এক জন গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের মেনেজার কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, শীত শুরুতে এখন পর্যটকের ভিড় জমার কথা। কিন্তু প্রথম অবরোধ থেকে পযটকশুন্য। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কয়েক দিনের অবরোধে আমাদের ৬ থেকে ৭লাখ টাকা লোকশান হয়েছে।
আলুটিলা কফি হাউজ অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মামুন আহমেদ জানান, ১০ থেকে ১২ দিন ধরে কোন পর্যটক আসছে না। ফলে বেচাকেনা নেই। সাত জন মানুষ কাজ করে এ প্রতিষ্ঠানে। আমরা ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কের ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শীতের শুরুতে পার্কে প্রতিদিন ৫শতাধিক বেশি পর্যটক বেড়াতে আসতেন। অবরোধের কারণে পার্ক এখন পর্যটকশুন্য। গত দুই সপ্তাহে অমাদের কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত।
জেলা পরিষদের পার্কের বাহিরে বার্মিজ মাকেটের দোকান মালিক টিটু চাকমা বলেন, শীতের শুরুতে পর্যটক আসবে বলে ঋন দিয়ে পাহাড়িদের ঐহিত্যবাহী পোশাক, চাদর, আচার ও চকলেট এনে দোকান ভরে রেখেছি। কিন্তু অবরোধে পর্যটক বেড়াতে আসেনি। গত দুই সপ্তাহ ধরে বেচা-বিক্রি নেই। আমার চারটি দোকান আছে। সবদোকানে। এই ঋন পরিশোধ করব কি করে।
খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, দেশে খাগড়াছড়ি পর্যটন কেন্দ্র অন্যতম। শীতের শুরু মৌসুমে পর্যটক না আসায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘ হলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। এখানে অনেক মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ করব তারা যাতে পর্যটন খাতকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখে। সাধারণত খাগড়াছড়িতে পর্যটন মৌসুমে মাসে ১৫ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন বলে জানান তিনি।