দীঘিনালায় চাকুরী ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তা নব রতন চাকমা: মাল্টা বাগান পরিদর্শনে ইউএনও।
মো. সোহেল রানা:: খাগড়াছড়ি দীঘিনালা উপজেলায় উদাল বাগান এলাকার নব রতন চাকমা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করত। চাকুরী বেতনে টাকা দিয়ে তার পরিবারের ভরন শেষ হয়ে যেত। প্রতি মাসে আয় করা সম্ভব হত না। পরিবারের কোন সদস্য অসুখ বিসুখ হলে ঋণ করে চিকিৎসা করতে হয়। আয়ের কথা চিন্তা করে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে কৃষি কাজে শুরু করে।
কৃষি অফিসে পরামর্শে প্রনোদনা মাধ্যমে ১একর ২০শতক জায়গায় বারি- ১ ও ভিয়েতনাম জাতে সাড়ে তিনশ সবুজ মাল্টা চারা রোপন করে, তিন বছর পর ফলন আসতে শুরু করে। প্রথমে ফলন কম আসে। এবছর সাড়ে তিনশ গাছে প্রায় ৮টন ফলন আসছে। প্রতি কেজি ৫০টাকা ধরে পাইকারী বিক্রি করছে। বেশি ভাগ অগ্রিম অর্ডার দিয়ে বাগান থেকে নিয়ে যাছে।
মাল্টা বাগান মালিক নব রতন চাকমা বলেন, আমি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরী করতাম, যা বেতন পেতাম তা দিয়ে সংসারের ভরন পোষণ আর ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ হয়েছে যেত। কোন আয় থাকতে না। চিন্তা পড়ে গেলাম, তাই চাকুরী ছেড়ে দিয়ে বাগান চাষে শুরু করলাম। প্রথমে আমি কৃষি অফিসে পরামর্শ নিয়ে মাল্টা বাগান শুরু করি।
১ একর ২০শত জায়গায় সাড়ে তিনশ বারি-১ ও ভিয়েতনামের জাতে সবুজ মাল্টা চারা রোপন করি। বর্তমানে সাড়ে তিনশত গাছে প্রায় ৮টন মাল্ট হবে। সবগুলো ফল বিক্রি করলে ৪লাখ টাকা মত হবে। ১লক্ষ ১০হাজার টাকা মত খরচ গেছে। ২ লক্ষ ৯০হাজার টাকা লাভ হবে আশা করছি।
স্থানীয় মাল্টার চাহিদা প্রচুর। আমার মোট সাড়ে ৭ একর জায়গায় মাল্টা চারা রোপন করেছি। মাল্টার পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আঁদা, হলুদ, কচু, করলা, বেগুনসহ নানা প্রকার শাক-সবজিও চাষ করছি এতে করে আমার বাড়তি আয় হচ্ছে। ফল চাষে কোন লোকশান নাই, এখন আমার ফলের বাগানে ৩/৪জন শ্রমিক নিয়মিতি কাজ করছে তাদেরও কর্মসংস্থান হয়েছে।
দীঘিনালা কৃষি কর্মকর্তা মো: কামরুজ্জামান সুমন বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের প্রদর্শনী প্রনোদনা মাধ্যমে বারি-১মাল্টা চাষের জন্য দীঘিনালা ইউনিয়নে উদাল বাগান এলাকার নব রতন চাকমা চারা দেয়া হয়। এবং কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরামর্শ মতে সউদ্যেগে চারাগুলো রোপন করে তিন বছরের মধ্যে ফলন আসতে শুরু করে। চতুর্থ বছরের ব্যপক ফলন আসছে। মাল্টা লাভ জনক ফল, দেশি সবুজ মাল্টা ৫০-৬০টাকা কেজি, বিদেশী মাল্টা কেজি প্রতি ৪শত থেক সাড়ে ৪শত। এন্টিঅক্সসাইড সমৃদ্ধ যা ক্যানসার প্রতিরোধী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ ইনামুল হাসান বলেন, কৃষি অফিসার ও গনমাধ্যমকর্মীসহ আমরা নব রতন চাকমা‘র মাল্টা বাগানে পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় বাজারের গিয়ে দেখি বিদেশী মাল্টা ৪শত-৫শত টাকা কেজি। সেই তুলনায় আমাদের দেশে উৎপাদিত সবুজ মাল্টা ৭০-৮০টাকা কেজি পাওয়া যায়।
পাহাড়ে উৎপাদন যদি বাড়ানো যায় আমাদের যে প্রচুর চাহিদা রয়েছে, এই চাহিদা ঘাড়তি সল্পমূল্যে পৌঁছে দিতে পারি, পুষ্টিটা নিশ্চিত করতে পারি এবং পাশাপাশি পাহাড়ে তামাকের চাষে প্রবণতা রয়েছে যেটি আমাদের পরিবেশর স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। তামাক বিকল্প হতে পারে মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনে ফল চাষ।