রাজনীতির মাঠে জনপ্রিয়তা মাপার কোনো যন্ত্র যদি থাকতো, তবে সেই যন্ত্রের কাঁটা বেগম খালেদা জিয়ার সামনে এসে হয়তো ভেঙে যেত। কারণ, সাধারণ মানদণ্ড দিয়ে তাকে মাপা যায় না। পৃথিবীতে বহু নেতা এসেছেন, বহু নেতা গিয়েছেন; কেউ বিপ্লব করেছেন, কেউ দেশ গড়েছেন, আবার কেউ ক্ষমতার দম্ভে ইতিহাস থেকে মুছে গেছেন।
কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, যেখানে মানুষের আঙুলের ছাপই শেষ কথা বলে, সেখানে বেগম খালেদা জিয়া যে রেকর্ড গড়েছেন, তা কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, বরং অলৌকিক। তিনি চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে মোট ১৮টি আসনে দাঁড়িয়ে ১৮টিতেই জয়ী হয়েছেন, এই একটি মাত্র বাক্যই আসলে হাজার পৃষ্ঠার ইতিহাসের চেয়েও ভারী।
এটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। ভাবা যায়? একজন মানুষ, যিনি রাজনীতির কোনো পাঠশালা থেকে আসেননি, কোনো জাদুকরী বংশপরিচয় নিয়ে রাজনীতি শুরু করেননি, তিনি কীভাবে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের ঘরের লোক হয়ে উঠলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে তাকাতে হবে সেই ১৮টি নির্বাচনী ফলের দিকে, যা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। সচরাচর দেখা যায়, বড় বড় নেতারাও জীবনের কোনো না কোনো সময়ে নিজের আসনে পরাজিত হন। উইনস্টন চার্চিল হেরেছিলেন, ইন্দিরা গান্ধী হেরেছিলেন, কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কখনও হারেননি। তিনি যেখানেই দাঁড়িয়েছেন, মাটি ফুঁড়ে ভোট বের হয়ে এসেছে। মনে হয়েছে, ওই মাটি যেন তাকেই খুঁজছিল।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় ভোট যদি হয় জনপ্রিয়তার একমাত্র লিটমাস টেস্ট, তবে বেগম জিয়া সেই টেস্টে কেবল পাস করেননি, তিনি ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের কথাই ধরুন। দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন বিএনপি নামক দলটির আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। কিন্তু তখন দৃশ্যপটে এলেন সাদা শাড়ি পরা এক নারী। তিনি যখন পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন আসনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন, তখন অনেকেই বাঁকা চোখে তাকিয়েছিলেন।
বলেছিলেন, এটি রাজনৈতিক আত্মহত্যা। কিন্তু ভোটের বাক্স খোলার পর দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। বগুড়া থেকে চট্টগ্রাম দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মানুষ পাগলের মতো তাকে ভোট দিয়েছে। এই পাঁচটি আসন কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকার ছিল না, ছিল ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের। এর মানে কী? এর মানে হলো, তার জনপ্রিয়তা কোনো আঞ্চলিক সীমানায় আটকে ছিল না। তিনি কেবল বগুড়ার ধানের শীষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন পুরো বাংলাদেশের ধানের শীষ।
পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমন নজির আছে কি না সন্দেহ, যেখানে একজন দলীয় প্রধান পাঁচটি আসনে দাঁড়িয়ে পাঁচটিতেই বিপুল ভোটে জয়ী হন। তাও একবার নয়, পরপর তিনবার! ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ এই তিনটি নির্বাচনে তিনি ১৫টি আসনে জয়ী হয়ে হ্যাটট্রিকের যে রেকর্ড গড়েছেন, তা ভাঙা তো দূরের কথা, ছোঁয়াও আগামী কয়েক প্রজন্মের জন্য অসম্ভব।
এই বিজয়ের মাহাত্ম্য বুঝতে হলে আমাদের একটু গভীরে যেতে হবে। একটি আসনে নির্বাচন করা এবং জেতা এক জিনিস, আর পাঁচটি আসনে একই সাথে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। একজন প্রার্থী স্বশরীরে কয়টি জায়গায় যেতে পারেন? কিন্তু বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে এক জাদুকরী ব্যাপার। তিনি হয়তো কোনো কোনো আসনে প্রচারণায় যাওয়ারই সুযোগ পাননি। কেবল তার নাম, তার ছবি, আর ‘ধানের শীষ’ প্রতীকই যথেষ্ট ছিল। মানুষ প্রার্থী দেখেননি, মানুষ দেখেছেন বেগম জিয়াকে।
তারা বিশ্বাস করেছেন, এই মানুষটি তাদের সাথে প্রতারণা করবেন না। এই যে অন্ধ বিশ্বাস, এটা কি একদিনে তৈরি হয়? না। এটা তৈরি হয় ত্যাগের মধ্য দিয়ে। স্বামী হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তিনি যখন রাজপথে নেমেছিলেন, তখন মানুষ তার মধ্যে দেখেছিল এক লড়াকু মাকে। সেই মা যখন ভোটের ডাক দিলেন, সন্তানরা কি ঘরে বসে থাকতে পারে? তাই তো দেখা গেছে, গ্রামবাংলার বৃদ্ধা নারী, যিনি হয়তো ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না, তিনিও লাঠিতে ভর দিয়ে কেন্দ্রে গিয়েছেন কেবল ‘খালেদা’র মার্কায় একটা সিল মারার জন্য। এই আবেগ, এই ভালোবাসা কোনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না, কোনো ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করা যায় না।
২০০৮ সালের নির্বাচনটি ছিল তার জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় অগ্নিপরীক্ষা। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার তাকে মাইনাস করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছিল। দলকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিকূল এক পরিবেশে, যখন দলের ভরাডুবি নিশ্চিত প্রায়, তখনও বেগম খালেদা জিয়া নিজের ক্যারিশমায় উজ্জ্বল ছিলেন।
সেই নির্বাচনে তিনি তিনটি আসনে দাঁড়িয়েছিলেন (সংবিধান অনুযায়ী তখন সর্বোচ্চ ৩টিতে দাঁড়ানোর নিয়ম করা হয়েছিল) এবং সেই চরম প্রতিকূল স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়েও তিনি তিনটি আসনেই জয়লাভ করেছিলেন। এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে যে, দল হারতে পারে, পরিস্থিতি প্রতিকূল হতে পারে, কিন্তু খালেদা জিয়া কখনও হারেন না।
তার ব্যক্তিগত ইমেজের কাছে সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে যায়। বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ এবং ফেনী-১ এই তিনটি আসনে তিনি যে ব্যবধানে জিতেছিলেন, তা ছিল বিস্ময়কর। যেখানে তার দলের বাঘা বাঘা নেতারা ধরাশায়ী হচ্ছিলেন, সেখানে তিনি ছিলেন এক অটল দুর্গ। এই ফলাফল প্রমাণ করে যে, তিনি কেবল বিএনপির নেতা নন, তিনি গণমানুষের নেতা। তার ভোট ব্যাংক কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সমাজ—সবার কাছেই তিনি এক আস্থার প্রতীক।
বিশ্ব রাজনীতির দিকে তাকালে এই অর্জনের বিশালত্ব আরও স্পষ্ট হয়। নেলসন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধী বা আধুনিক যুগের বড় বড় রাষ্ট্রনায়ক সবারই জনপ্রিয়তার তুঙ্গস্পর্শী মুহূর্ত ছিল। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতি বড় নির্মম। এখানে জোয়ার-ভাটা থাকে। অথচ বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখি শুধুই জোয়ার। ভাটার কোনো স্থান নেই। তিনি যখনই ব্যালট পেপারে নিজের নাম লিখিয়েছেন, তখনই বিজয় মাল্য তার গলায় উঠেছে। এর কারণ কী? কারণ হলো তার আপসহীনতা।
বাংলাদেশের মানুষ মেরুদণ্ডহীন নেতা পছন্দ করে না। তারা চায় এমন কাউকে, যে তাদের হয়ে কথা বলবে, যে মাথা নত করবে না। বেগম জিয়া তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই এই চরিত্রের প্রমাণ দিয়ে আসছেন। তিনি স্বৈরাচারের সাথে আপস করেননি, তিনি অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। এই ‘আপসহীন’ তকমাটিই তাকে ভোটের মাঠে অপরাজেয় করে তুলেছে।
মানুষ জানে, খালেদা জিয়া কথা দিলে কথা রাখেন। তিনি যখন বলেন দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও, তখন মানুষ বোঝে দেশের অবস্থা সত্যিই খারাপ। এই যে সংযোগ, এটা বিরল। আরেকটি মজার বিষয় হলো, তিনি যেসব আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেগুলোর ভৌগোলিক বৈচিত্র্য। তিনি কেবল নিজের জন্মস্থান বা স্বামীর জন্মস্থানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি।
তিনি ঢাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সাতক্ষীরা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, লক্ষ্মীপুর থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন, তার বিজয়ের পতাকা সব জায়গায় উড়েছে। এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি কোনো আঞ্চলিক নেতা নন, তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তার বিরোধীরা অনেক সময় তাকে একগুঁয়ে বা জেদি বলে সমালোচনা করেন। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা এই জেদকে দেখেন তাদের অধিকার আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে।
তারা মনে করেন, এই জেদি মানুষটিই পারবে বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে। তাই যখনই সুযোগ এসেছে, তারা ব্যালটের মাধ্যমে তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। ১৮টি আসনের ১৮টিতেই জয় এটা কোনো রূপকথা নয়, এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক রূঢ় বাস্তবতা, যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যখন রাজনীতি অনেক বেশি জটিল আর কুটিল হয়ে গেছে, তখন বেগম জিয়ার এই সরল জনপ্রিয়তার অংকটি আমাদের বিস্মিত করে। কোনো ডিজিটাল ক্যাম্পেইন ছিল না, কোনো সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড় ছিল না, ছিল কেবল মানুষের মুখের কথা আর হৃদয়ের টান। তিনি যখন মাইলের পর মাইল রোডমার্চ করতেন, তখন রাস্তার দুই পাশে লক্ষ লক্ষ মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত কেবল তাকে একনজর দেখার জন্য। এই মানুষগুলোই ছিল তার শক্তি। তারা তাকে ভোট দিয়েছে কারণ তারা তার মধ্যে নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখেছে। তিনি যখন কাঁদতেন, বাংলাদেশ কাঁদত। তিনি যখন হাসতেন, বাংলাদেশ হাসত।
এই ইমোশনাল কানেকশন বা আবেগের বন্ধন তাকে ভোটের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছিল। অনেকেই বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। কিন্তু বেগম জিয়ার এই রেকর্ডটি বোধহয় রাজনীতির সেই ‘শেষ কথা’র মতোই ধ্রুব সত্য হয়ে থাকবে। ১৮টি আসন, ১৮টি বিজয় এই স্কোরকার্ডটি ভাঙা অসম্ভব। কারণ এই স্কোরকার্ড গড়তে যে পরিমাণ ত্যাগ, ধৈর্য আর সাহসের প্রয়োজন, তা সমসাময়িক রাজনীতিতে বিরল।
তার এই জনপ্রিয়তার পেছনে আরেকটি বড় কারণ ছিল নারী ভোটাররা। বাংলাদেশে নারী জাগরণের যে ঢেউ লেগেছিল, তার অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। গ্রামের রক্ষণশীল পরিবারের নারীরা তাকে দেখে সাহস পেয়েছিলেন। তারা ভেবেছিলেন, একজন নারী যদি দেশ চালাতে পারেন, তবে আমরা কেন পারবো না? এই নারীরাই ছিল তার নীরব ভোট ব্যাংক। ভোটের দিন তারা লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন।
তাদের কাছে খালেদা জিয়া কেবল একজন নেত্রী ছিলেন না, ছিলেন তাদের অস্তিত্বের অংশ। তিনি তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, তাদের হাতে বই তুলে দিয়েছেন। এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকেই ব্যালট বাক্স ভরে উঠত ধানের শীষে। এই ১৮টি আসনের বিজয় তাই কেবল রাজনৈতিক বিজয় নয়, এটি একটি সামাজিক বিপ্লবেরও স্বাক্ষর। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, একজন নারী তার যোগ্যতা আর ব্যক্তিত্ব দিয়ে পুরুষশাসিত সমাজের সব দেওয়াল ভেঙে ফেলতে পারেন।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জনপ্রিয়তা ধরে রাখা জনপ্রিয় হওয়ার চেয়েও কঠিন। ক্ষমতার মসনদে বসলে অনেক সময় মানুষ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু বেগম জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও জনবিচ্ছিন্ন হননি। বরং প্রতিবার ক্ষমতার মেয়াদের শেষে বা বিরোধী দলে থাকার সময় তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। এর কারণ, তিনি সবসময় মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছেন।
তার রাজনৈতিক বিরোধীরা তাকে অনেকবার রাজনৈতিকভাবে কবর দিতে চেয়েছেন, কিন্তু প্রতিবারই তিনি ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জেগে উঠেছেন আর এই জেগে ওঠার শক্তি জুগিয়েছে জনগণ। ব্যালট পেপার ছিল সেই শক্তির উৎস। তিনি যখনই ডাক দিয়েছেন, মানুষ সাড়া দিয়েছে। হরতাল হোক, অবরোধ হোক কিংবা নির্বাচন খালেদা জিয়ার ডাক মানেই ছিল এক চূড়ান্ত নির্দেশ। এই যে অথরিটি বা কর্তৃত্ব, এটা তিনি অর্জন করেছিলেন মানুষের ভালোবাসা দিয়ে, বন্দুকের নল দিয়ে নয়।
তার এই ১৮টি আসনের বিজয়গাথা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। এটি খোদাই করা আছে ইতিহাসের পাথরে। এই রেকর্ড আগামী দিনের গবেষকদের ভাবাবে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের নতুন করে ভাবতে শেখাবে। তারা গবেষণা করবে, কী এমন জাদু ছিল এই নারীর হাতে, যা দিয়ে তিনি একটি পুরো জাতিকে এক সুতোয় গেঁথেছিলেন? কী সেই মন্ত্র, যা দিয়ে তিনি ১৮ বার ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধজয় করেছিলেন? উত্তরটা খুব সহজ, আবার খুব কঠিনও। উত্তরটা হলো দেশপ্রেম আর সততা।
তিনি দেশকে ভালোবেসেছেন নিজের চেয়েও বেশি, আর মানুষ তার প্রতিদান দিয়েছে উজাড় করে। এই লেনদেন ছিল নিখাদ। এখানে কোনো ভেজাল ছিল না। তাই তো তিনি ‘দেশনেত্রী’। তাই তো তিনি ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’। তার এই উপাধিগুলো কোনো চাটুকারের দেওয়া নয়, এগুলো অর্জিত হয়েছে প্রতিটি ব্যালটের মাধ্যমে, প্রতিটি মানুষের দোয়ার মাধ্যমে।
পরিশেষে একটা কথাই বলা যায়, বেগম খালেদা জিয়ার এই ১৮ আসনের ১৮টিতেই জয়ের রেকর্ড কেবল একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব নয়। এটি একটি বার্তা। এই বার্তা বলে দেয় যে, সত্যিকারের নেতাকে কোনো সীমানা দিয়ে আটকে রাখা যায় না। তাকে কোনো নির্দিষ্ট আসনে বেঁধে রাখা যায় না। তিনি যেখানেই যাবেন, সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পাবেন।
তিনি বগুড়ায় দাঁড়ালে বগুড়া তার, ফেনীতে দাঁড়ালে ফেনী তার, খুলনায় দাঁড়ালে খুলনা তার। পুরো বাংলাদেশটাই যেন তার নির্বাচনী এলাকা। এমন ভাগ্য কজন রাজনীতিবিদের হয়? হয়তো শতাব্দীতে একজন। আর সেই ‘একজন’ হলেন আমাদের বেগম খালেদা জিয়া। তার সুস্থতা বা অসুস্থতা, ক্ষমতা বা ক্ষমতাহীনতা সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার এই অর্জন। যতদিন বাংলাদেশে নির্বাচন হবে, যতদিন মানুষ ভোট দেবে, ততদিন এই ১৮টি আসনের গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরবে।
এটি এমন এক রেকর্ড, যা তাকে রাজনীতির ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। বিশ্বের আর কোনো নেতার ঝুলিতে এমন ১০০ ভাগ সাফল্যের রেকর্ড আছে কি না আমার জানা নেই, তবে বাংলাদেশের মানুষের মনে তিনি যে ১০০ ভাগ জায়গা দখল করে আছেন, তার প্রমাণ এই ব্যালট পেপারগুলো। এই অর্জন তাকে অনন্য, অসাধারণ এবং বিরল এক উচ্চতায় আসীন করেছে, যেখানে আর কেউ পৌঁছাতে পারেনি, হয়তো পারবেও না।
লেখক : অর্থনীতি বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।
Email : msislam.sumon@gmail.com



অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন